বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উড়ালপুলের কংক্রিটের ভারবহন ক্ষমতা কমে যাওয়াতেই বড়সড় ফাটল দেখা গিয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন সেতু বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, উড়ালপুলের যে অংশে ফাটল দেখা গিয়েছে, সেই অংশের ও তার আশপাশের কংক্রিট তুলে ফেলে তার মান যাচাই করা দরকার। এ দিকে, উড়ালপুলের যে অংশটি বিরাটি মোড়ের কাছ থেকে উঠে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের খলিসাকোটার দিকে গিয়েছে, বুধবারও সে দিকের যানবাহন বন্ধ ছিল। উড়ালপুলের অন্য দিক,
অর্থাৎ বেলঘরিয়ার খলিসাকোটা থেকে যশোহর রোডে বিমানবন্দরের তিন নম্বর গেটের দিকে আসার গাড়ি স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বেলঘরিয়া উড়ালপুলের রাস্তায় বড়সড় এক ফাটল দেখা যায়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য যশোহর রোড ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগকারী ওই উড়ালপুলে যানচলাচল বন্ধ করে দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২৭.৪৫০ মিটার লম্বা ও ৮ মিটার চওড়া ওই অংশের একটি জায়গায় কংক্রিট-সহ পিচ (ম্যাস্টিক অ্যাসফল্ট)-এর চাঙড় উঠে গিয়ে নীচে লোহার রডের কাঠামো বেরিয়ে পড়ে। ফাটলের আশপাশের অংশেও চিড় দেখা যায়। বিশেষজ্ঞেরা দেখেন, উড়ালপুলের রাস্তার বেশ কিছুটা অংশ অনেকটাই বসে গিয়েছে। |
ফাটলের জন্য বন্ধ উড়ালপুল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র |
সেতু তৈরি হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে কেন এত বড় ফাটল দেখা গেল? প্রাথমিক তদন্তের পরে সেতু বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সেতুর কংক্রিটের যে অংশটি ভেঙে গিয়েছে, তার মান ভাল ছিল না। হাইওয়ে বিশেষজ্ঞ তথা রাজারহাট পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার মনোদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেতু তৈরির সময়ে ওই রাস্তা দিয়ে এক বছরে কত গাড়ি যেতে পারে, তার একটা আনুমানিক হিসেব করা হয়। সেই অনুযায়ী কংক্রিটের ঢালাই করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওই হিসেব করা হয়েছিল কি না, সেটাও দেখা দরকার।” এ ছাড়াও, বক্স স্ট্রাকচারের এই সেতুর নকশা ঠিক ছিল কি না, তা-ও যাচাই করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, শুধু ফাটল ধরা অংশেরই নয়, পুরো সেতুরই কংক্রিটের ভারবহন ক্ষমতা এখন কতটা আছে, তা যাচাই করা দরকার। ন্যাশনাল হাইওয়ে অফ ইন্ডিয়ার প্রকল্প রূপায়ণ শাখার জেনারেল ম্যানেজার তথা প্রকল্প অধিকর্তা এস কে খুশবা বলেন, “কয়েক জন সেতু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যেই তাঁরা এই সেতু পরিদর্শনে আসবেন। ভাঙা অংশের আলট্রাসোনোগ্রাফি করা হবে। শুধু কংক্রিটই নয়, সেতুতে ব্যবহার হওয়া লোহা ও অন্যান্য জিনিসের মান কেমন ছিল, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হবে।”
এ দিকে, সেতুর যে দিকটি দিয়ে এখন যানবাহন চলছে, সেই অংশেও রাস্তায় গর্ত দেখা গিয়েছে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যে গাড়িগুলি যশোহর রোডে বিমানবন্দরের তিন নম্বর গেটের কাছে গিয়ে নামে, ঠিক সেখানেই রয়েছে বড়সড় গর্তটি। অভিযোগ, ওই গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃষ্টিতে ওই গর্তে জল জমে আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। গর্তটি দ্রুত না সারালে উড়ালপুলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকেই যাবে, বলছেন তাঁরা।
|