|
|
|
|
কেন এসেছিস, কান্নায় ভেঙে বান্ধবীকে বললেন সারদা-কর্তা
নিজস্ব সংবাদদাতা |
‘বাল্যবান্ধবী’ দেখা করতে এসেছিলেন। তাঁর হাত ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন সারদা-কর্তা। পকেট থেকে রুমাল বার সুদীপ্ত সেন কান্নাভেজা গলায় বললেন, “তুই কেন এসেছিস!”
সেই কান্না দেখে কিছুটা হতভম্ভ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও।
সারদা-কর্তার পিছনে-পিছনে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন একদা তাঁর ওই ছায়াসঙ্গিনী। দেখে-শুনে থমথমে মুখে তিনি পুলিশের ভ্যানে উঠে গেলেন। যার ভিতরে ঠিক পিছনের আসনে বসে মাথা নিচু করে তখনও কেঁদে চলেছেন সুদীপ্ত।
মঙ্গলবার দুপুরে আলিপুর মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের আদালতের বাইরে এ হেন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন উপস্থিত পুলিশ-কর্মীরাও। লেক থানায় রুজু এক প্রতারণা-মামলায় সুদীপ্ত-দেবযানী ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। এ দিন ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুপর্ণা রায় দু’জনকেই ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখতে বলেছেন।
সোমবার হেস্টিংস থানার এক মামলায় সুদীপ্ত-দেবযানীকে পুলিশি হেফাজতে আনার আর্জি জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। পাশাপাশি মুম্বই পুলিশও তাদের দু’টি মামলায় ‘হাজিরা পরোয়ানা’-র আর্জি পেশ করে। তবে সুদীপ্তের পরিচিতি ও ঠিকানায় ত্রুটি থাকায় মুম্বই পুলিশের আর্জি এ দিন নাকচ করে দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি হেস্টিংস থানার আর্জিও নাকচ হয়েছে। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন হেস্টিংস থানা সোমবার সুদীপ্ত-দেবযানীকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সুদীপ্তের কৌঁসুলি সমীর দাস ও দেবযানীর কৌঁসুলি অনির্বাণ গুহঠাকুরতা সওয়ালে যুক্তি দেন, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এমন আর্জি করা যায় না। কলকাতা পুলিশের আবেদনে আইনি ত্রুটি রয়েছে বলে ওঁরা দাবি করেন। এর পরেই হেস্টিংস থানার আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত। |
|
পুলিশ ভ্যানে দেবযানীর পিছনে বসে তখনও কেঁদে চলেছেন সূদীপ্ত সেন।
মঙ্গলবার আলিপুর আদালতের বাইরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী। |
এ সবের মাঝেই সুদীপ্তের বান্ধবীকে কেন্দ্র করে নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা। কী রকম?
পুলিশ-সূত্রের খবর: এ দিন সকাল থেকে আদালত চত্বরে এক মহিলা ঘোরাঘুরি করছিলেন। নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন সুদীপ্তের ‘ছোটবেলার বান্ধবী’ হিসেবে। বেলা দেড়টা নাগাদ সারদা-কর্ণধারকে কোর্ট লক-আপে আনার পরে তিনি পুলিশের কাছে রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন, যাতে তাঁকে এক বার সুদীপ্তের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। পুলিশ অনুমতি দেয়নি। “উনি লালবাজারেও বেশ ক’বার এসেছেন। কোনও বারই ওঁর প্রার্থনা মঞ্জুর হয়নি।” জানাচ্ছেন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার।
তা হলে এ দিন দেখা হল কী করে?
হল আদালত-চত্বরের বাইরে। যখন এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে সুদীপ্ত পুলিশের গাড়িতে উঠছেন। মাঝবয়সী ওই মহিলা এগিয়ে গিয়ে তাঁর হাত ধরেন, আর তখনই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন সারদা-কর্তা। পুলিশ-সূত্র বলছে, মহিলা অনাবাসী, আমেরিকার বাসিন্দা। সুদীপ্তের খবর জানার পরেই তাঁর কলকাতায় আগমন। এ দিন আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর মন্তব্য, “আমি এই মামলা দেখতে এসেছিলাম। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
এ দিকে সুদীপ্তের কৌঁসুলিদের দাবি: প্রায় দেড় মাস পুলিশি হেফাজতে লাগাতার জেরার জেরে তাঁদের মক্কেল ক্রমশ শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। তিনি পেটের সংক্রমণে ভুগছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন সমীরবাবু। “পুলিশ সারদার একাধিক সম্পত্তির হদিস পেয়েছে। সংস্থার বহু দামি গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যেগুলো পড়ে রয়েছে খোলা আকাশের নীচে। পুলিশ তা বিক্রিও করতে পারছে না।” মন্তব্য সমীরবাবুর। দেবযানীর আইনজীবীদেরও অভিযোগ, তাঁদের মক্কেলকে জেরায় একই প্রশ্ন বার বার করা হচ্ছে।
অন্য দিকে সরকারি কৌঁসুলি পীযূষকান্তি মণ্ডল এ দিন সুদীপ্ত-দেবযানীর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, “সারদার বিরাট সাম্রাজ্য। এখনও অনেক তদন্ত বাকি। তাই জামিনের আবেদন খারিজ করা হোক।” |
|
|
|
|
|