কলকাতা পুরসভা এলাকার বাড়িগুলির ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
‘কলকাতা মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কোড’ এবং ‘রাজ্য মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কোড’ অনুযায়ী, কলকাতা পুরসভা এলাকায় সাড়ে ১৫ মিটার উঁচু বাড়ি ও রাজ্যের অন্যান্য পুর-এলাকায় সাড়ে ১৪ মিটার বা তার বেশি উঁচু বাড়ির ক্ষেত্রে সৌর প্যানেল বসানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ রেগুলেটরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্যের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ১০ শতাংশ বিকল্প শক্তি থেকে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ২০০৯ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর দাবি, কলকাতা পুরসভা এবং রাজ্যের অন্যান্য পুর-এলাকার জন্য যে নির্দেশ রয়েছে, সেগুলির কোনওটিই এ রাজ্যে মানা হয় না। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী সমস্ত পুরসভাকে সৌর প্যানেল বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে রাজ্য পুর দফতরকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) অনিন্দ্য কারফর্মা বলেন, “আদালতের রায় হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলব না। তবে আদালত যদি এমন নির্দেশ দেয়, তা আমাদের কার্যকর করতেই হবে।”
ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, রাজ্যে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ১০ শতাংশ বিকল্প শক্তি থেকে নেওয়ার নির্দেশ সব বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে মানতে হবে এবং আগামী চার মাসের মধ্যে সেই ব্যবস্থা চালু করতে হবে। পাশাপাশি, অপ্রচলিত শক্তির বিষয়ে রাজ্য সরকারকে জনমানসে প্রচার চালাতে হবে। সুভাষবাবু জানান, ২০০৮ সালে প্রধামন্ত্রী মনমোহন সিংহ জাতীয় সৌর প্রকল্প (ন্যাশনাল সোলার মিশন) ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, সেটিও কার্যত বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সুভাষবাবু আরও জানান, এ রাজ্যে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ৯৭ শতাংশ আসে তাপবিদ্যুৎ থেকে। অথচ আন্তর্জাতিক পরিবেশ নীতি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে তাপবিদ্যুতের বদলে বিকল্প শক্তির প্রয়োজন রয়েছে বলে তাঁর দাবি।
সুভাষবাবু বলেন, “শুধু তাপবিদ্যুৎ নয়, গ্রামে যে পরিমাণে কেরোসিনের বাতি ব্যবহার করা হয়, তা থেকেও যথেষ্ট দূষণ ছড়ায়। তার বদলে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করলে তা যেমন পরিবেশের দিক থেকে লাভজনক হবে, তেমনই আর্থিক দিক থেকেও সরকার লাভবান হবে।” সুভাষবাবুর হিসেবে, কেরোসিনে ভর্তুকি বাবদ সরকারকে বছরে ১৪০০ কোটি টাকার বেশি দিতে হয়। গ্রামেগঞ্জে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করলে, সেই পরিমাণ কমবে বলেও তাঁর দাবি। এ প্রসঙ্গে রাজ্যে যাঁরা সৌরবাতি তৈরি করেন, তাঁদের যাতে কর ছাড় দেওয়া হয়, তা নিয়েও আদালতে আর্জি জানান সুভাষবাবু। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।
আদালত নির্দেশ দিলেও কলকাতা বা রাজ্যের অন্যান্য পুর-এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ কতটা লাভজনক, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের যুক্তি, এ রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকায় বছরে আট মাসই সৌরবিদ্যুৎ তৈরির মতো পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে না। তবে রাজ্যের অপ্রচলিত শক্তি উন্নয়ন নিগমের প্রাক্তন অধিকর্তা শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, “কলকাতায় অন্তত ৪ মাস তীব্র সূর্যালোক থাকে। ৪ মাস থাকে বৃষ্টি। বাকি চার মাস মেঘলা। যেটুকু সময়ে সূর্যের আলো মেলে, তখন সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা গেলে অনেকাংশেই পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব।” তিনি আরও জানান, এক ইউনিট সৌরশক্তি ব্যবহার করলে ০.৭ কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড কম নির্গত হয়। এটাই সৌরবিদ্যুতের সবচেয়ে ভাল দিক। |