সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারি নিয়ে কেস ডায়েরিতে কী আছে, তা এখনও জানা যায়নি। আর কেস ডায়েরিতে কী আছে, তা না-জেনে বা না-দেখেই সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন আছে কি নেই, সেটা ঠিক করা যায় কি? সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থ মামলায় সরকার ও আদালত-বান্ধবের সওয়ালের জবাব দিতে গিয়ে
বুধবার আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এই প্রশ্ন তোলেন।
এই প্রসঙ্গে গুড়াপের হোমে অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তোলেন আবেদনকারীর আইনজীবী। তিনি বলেন, কেস ডায়েরি দেখার পরেই হাইকোর্ট জানতে পারে, গুড়াপ হোমের এক জন আবাসিক নয়, আরও দু’জন আবাসিকের মৃতদেহ দামোদরের পাড়ে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। সিআইডি তা জেনেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তার পরেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিআইডি-র হাত থেকে ওই তদন্তের দায়িত্ব সরিয়ে নিয়ে সিবিআই-কে দেয়। অথচ সারদা কাণ্ডের মতো বিশাল কেলেঙ্কারির কেস ডায়েরিতে কী আছে, তা এখনও জানাই গেল না। কেস ডায়েরি ছাড়া তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে কি না, তা নির্ধারণ করা যায় না বলেই সুব্রতবাবুর অভিমত। প্রশ্ন উঠছে, কেস ডায়েরিই যেখানে অমিল, সেখানে সিবিআইয়ে অনীহা কেন?
সিবিআই-কে লেখা সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের চিঠির উল্লেখ করে সুব্রতবাবু জানান, সরকার পক্ষ ও আদালত-বান্ধব ওই চিঠি নিয়ে কিছুই বলেননি। তাঁর বক্তব্য, এই মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানানোর মূল কারণ ওই চিঠি। সিবিআই সুদীপ্তের চিঠিটি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র দফতর সেটি পাঠায় বিধাননগর কমিশনারেটে। কমিশনারেটের উচিত ছিল, ওই চিঠির ভিত্তিতে এফআইআর করে চিঠিটি সিবিআই-কে ফেরত পাঠানো। কিন্তু কমিশনারেট তা করেনি। চিঠিতে সুদীপ্ত কিছু রাজনৈতিক নেতা, আমলা ও পুলিশ অফিসারের নাম লিখেছিলেন। সেই চিঠির ভিত্তিতে কী তদন্ত হল, তার উত্তর মেলেনি বলে সুব্রতবাবু জানান। তাঁর বক্তব্য, এর মধ্যে দেখা গেল, সুদীপ্তই এখন সিবিআই তদন্তের বিরোধী! তিনি রাজ্য সরকারের তদন্তে সন্তুষ্ট। এর থেকেই বোঝা যায়, এই তদন্তে সিবিআই-কে কেন দরকার।
সুব্রতবাবুর আদালতে বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করছেন, সিবিআই ছাড়া অন্য কোনও সংস্থা সারদার দেশজোড়া কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে পারবে না। রাজ্যের কোনও সংস্থা তো এই তদন্ত করতেই পারে না। রাজ্য সরকারের সংস্থার পক্ষে নিরপেক্ষ তদন্ত করা সম্ভব নয়। কারণ, এর মধ্যেই এই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে শাসক দলের কিছু মন্ত্রী-নেতার নাম।
রাজ্যের সংস্থা নিরপেক্ষ নয়, এই অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্ট যে আগের সরকারের আমলে নেতাই, রিজওয়ানুর, নন্দীগ্রাম-সহ সব ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল, সুব্রতবাবু তা মনে করিয়ে দেন। বর্তমান শাসক দলই সেই সময় রাজ্যের সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এখন সারদার ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রতারণার ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা হলেই তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে যাবে কেন, প্রশ্ন তোলেন সুব্রতবাবু।
এ দিনই ওই মামলার শুনানি শেষ হয়ে যায়। এখন রায়ের অপেক্ষা।
|