আলিপুর আদালতে বাল্যবান্ধবীকে দেখে মঙ্গলবার তাঁর চোখে জল এসে গিয়েছিল। তার ২৪ ঘণ্টা পরে, বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতের লক-আপেও অঝোরে কাঁদলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন।
সারদা-কর্তা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে জানান তাঁর আইনজীবীরা। হেস্টিংস থানায় দায়ের করা প্রতারণার একটি মামলায় সুদীপ্ত এবং সারদার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে এ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বরূপ শেঠ দু’জনকেই ১৮ জুন পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশ জানায়, জিতেন্দ্র রাউত নামে হেস্টিংস থানা এলাকার এক বাসিন্দা ৩ মে অভিযোগ জানান, বিদেশ ঘোরানোর নামে সারদা ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস সংস্থা তাঁর কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছিল। কয়েক কিস্তিতে ৬৩ হাজার টাকা তাঁকে ফেরত দেওয়া হলেও ওই সংস্থার কাছ থেকে ৩৭ হাজার টাকা এখনও পাননি তিনি। সংস্থার দুই এজেন্ট দিলীপ দাস ও সুচিত্রা সাহু এবং সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্তের বিরুদ্ধে তিনি প্রতারণা এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। সরকারি আইনজীবী বাসুদেব দত্ত আদালতে জানান, প্রতারণার অঙ্ক বড় কথা নয়। |
বুধবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে সারদা-কর্তা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
কয়েক লক্ষ বিনিয়োগকারীর স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে। এই প্রতারণায় আর কোন কোন ব্যক্তি কী ভাবে জড়িত, তা জানার জন্যই পুলিশ সুদীপ্ত-দেবযানীকে জেরা করতে চাইছে। তদন্তের স্বার্থে এবং সারদা গোষ্ঠীর অন্য সম্পত্তির
হিসেব পেতে অভিযুক্তদের পুলিশি হাজতে নেওয়া জরুরি।
পুলিশি সূত্রের খবর, নিরাপত্তার খাতিরে এ দিন সকাল ১০টার আগেই সুদীপ্ত ও দেবযানীকে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ব্যাঙ্কশাল আদালতের লক-আপে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। মহিলা পুলিশের পাহারায় দেবযানীকে রাখা হয়েছিল আলাদা লক-আপে। আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা জানান, ভিতরে ঢোকার কিছু ক্ষণের মধ্যেই মাথা নিচু করে কাঁদতে শুরু করেন সুদীপ্ত। লক-আপের পাহারায় থাকা পুলিশকর্মীদের
দাবি, কেন কাঁদছেন জানতে চাইলে সুদীপ্ত তাঁদের জানান, মানসিক ভাবে তিনি বিপর্যস্ত।
দেবযানীকে অবশ্য এ দিন মহিলা পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। লক-আপে মাটির ভাঁড়ে দেওয়া চায়ে চুমুকও দিয়েছেন তিনি। খেয়েছেন বিস্কুটও। বেলা সওয়া ২টো নাগাদ বিচারকের এজলাসে হাজির করানো হয় অভিযুক্তদের। শুনানি চলাকালীন সাদা হাফহাতা পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা পরা অবস্থায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন সুদীপ্ত। দেবযানীর দিকে এক বারও তাকাতে দেখা যায়নি তাঁকে।
শুনানি পর্বের শুরুতেই সুদীপ্তের আইনজীবী সমীর দাস আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল একই কায়দায় একের পর এক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে পুলিশ অভিযোগ করেছে। একই কায়দায় যদি প্রতারণার অভিযোগ ওঠে, তাঁকে আবার পুলিশি হাজতে নিয়ে ফের জেরা করার প্রয়োজন কী, সেটা তিনি বুঝতে পারছেন না। পুলিশ সুদীপ্তের সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিচ্ছে না কেন, বিচারকের কাছে তা-ও জানতে চান সমীরবাবু।
দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা আদালতে জানান, হেস্টিংস থানায় দায়ের করা এফআইআরে তাঁর মক্কেলের নাম নেই। তাঁক মক্কেল বেশ কয়েক দিন ধরে পিঠে যন্ত্রণা অনুভব করছেন। এর আগে অসুস্থতার জন্য তাঁকে হাসপাতালেও থাকতে হয়েছে। পুলিশি হাজতে দেবযানীকে পাঠানোর যুক্তিটা কী, তিনি তা বুঝতে পারছেন না।
|