প্রায় দেড় কোটি টাকার চেক-জালিয়াতিকে কেন্দ্র করে বুধবার কলকাতা জিপিও-য় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ফেরার মূল অভিযুক্তকে অফিসে পেয়ে ক্ষুব্ধ কর্মীরা দিনভর তাঁকে আটকে রাখেন। সন্ধ্যায় তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ওই জালিয়াতি হয়েছে জিপিও-র মানি অর্ডার এবং সেভিংস ব্যাঙ্ক বিভাগে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে জালিয়াতির অভিযোগে এক অফিসার-সহ দুই কর্মীকে কর্তৃপক্ষ সাসপেন্ডও করেন। সেই সঙ্গে ওই দু’টি বিভাগের সব কর্মীর বেতন থেকে প্রতি মাসে টাকা কাটছেন তাঁরা। প্রতিবাদে কর্মীরা বেশ কিছু দিন ধরেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
শ্যামসুন্দর নন্দন নামে সাসপেন্ড হওয়া ওই অফিসার বিভাগীয় শুনানিতে হাজিরা দিতে এ দিন তাঁর আইনজীবীকে নিয়ে জিপিও-য় হাজির হন। মারমুখী কর্মীদের সামনে অভিযুক্ত অফিসার লিখিত ভাবে স্বীকারোক্তি দেন, ওই জালিয়াতিতে তিনি যুক্ত। তিনি আরও লেখেন, “জালিয়াতির জেরে যাঁদের বেতন থেকে টাকা কাটা হচ্ছে, তাঁরা নির্দোষ।” শ্যামসুন্দরবাবু প্রায় ৩৫ বছর কাজ করছেন ডাক বিভাগে। জিপিও-তেই তিন দশক। |
অভিযুক্ত শ্যামসুন্দর নন্দন। —নিজস্ব চিত্র |
জালিয়াতি হয়েছিল কী ভাবে?
পুলিশি সূত্রের খবর, অর্থ লগ্নি সংস্থা সঞ্চয়িতার বৈধ লগ্নিকারীদের মেটানোর জন্য আদালত-নির্দিষ্ট একটি সংস্থা টাকা জমা রেখেছে জিপিও-র কাছে। বার্ধক্য ভাতার টাকাও রয়েছে। জিপিও এই টাকা রেখেছে স্টেট ব্যাঙ্কে তাদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। বৈধ প্রাপকদের মধ্যে যাঁদের খোঁজ মিলছে না, তাঁদের চেক ফিরে আসছে জিপিও-তে। সেই চেকের নম্বর জাল করে টাকা তুলে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই।
প্রায় তিন বছর আগে শুরু হয় এই জালিয়াতি। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে স্টেট ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার তরফে ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল হেয়ার স্ট্রিট থানায় ডায়েরি করা হয়। জিপিও এবং বড়বাজার ডাকঘরের লেনদেন হয় স্টেট ব্যাঙ্কের ওই শাখাতেই। জিপিও-র কর্মী-নেতা সচ্চিদানন্দ বিশ্বাস বলেন, “জিপিও-র ডেপুটি ডিরেক্টর পদের একাধিক কর্তার সই করা বহু চেক জালিয়াতি হয়েছে। ওই কর্তাদের বেতন থেকে টাকা না-কেটে নির্দোষ প্রায় ১২ জন কর্মীর বেতন থেকে টাকা কাটা হচ্ছে।” চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল (সিপিএমজি-বেঙ্গল সার্কল) যশোবন্ত পণ্ডা বলেন, “যে-বিভাগে জালিয়াতি হয়েছে, সেখানকার কর্মীদের বেতন থেকে টাকা কাটা হচ্ছে। ডাক বিভাগের এটাই রীতি।” অভিযুক্ত অফিসার জিপিও-র অন্য তিন কর্মীর নামেও অভিযোগ এনেছেন। স্টেট ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার ম্যানেজার সিদ্ধার্থ সিংহ বলেন, “আমাদের ভিজিল্যান্স বিভাগ বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে।” |