টানাপোড়েন শেষ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জেরে শেষ পর্যন্ত পিছিয়েই গেল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট ওয়ান ও পার্ট টু পরীক্ষা। সব ক’টি পরীক্ষাই মাসখানেক পিছিয়েছে। বুধবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।
পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় পরবর্তী বছরের ক্লাসও শুরু হবে দেরিতে। এবং তার প্রভাব পড়বে পঠনপাঠনের উপরে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশঙ্কা, সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পার্ট টু পরীক্ষার্থীরা, যাঁরা তৃতীয় বর্ষে উঠবেন। কারণ তৃতীয় বর্ষের ক্লাস দেরিতে শুরু হলেও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই পার্ট থ্রি পরীক্ষা পিছোনো সম্ভব হবে না। ফলে সময়মতো পাঠ্যক্রম শেষ করাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ভুগতে হবে ছাত্রছাত্রীদেরই।
বুধবার জারি করা নির্দেশিকায় বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, বিএ, বিএসসি পার্ট টু (জেনারেল) ১৮ জুনের বদলে শুরু হবে ১৮ জুলাই। বিএ, বিএসসি পার্ট ওয়ান (অনার্স) ৯ জুলাইয়ের বদলে ২ অগস্ট এবং বিএ, বিএসসি পার্ট ওয়ান (জেনারেল) ১৬ জুলাইয়ের পরিবর্তে ১২ অগস্ট শুরু হবে। বিএ, বিএসসি, বিকম পার্ট ওয়ান (মেজর) পরীক্ষাও ৯ জুলাইয়ের বদলে শুরু হবে ২ অগস্ট। পরীক্ষার সবিস্তার সূচি এ দিন ঘোষণা করা হয়নি। তবে শীঘ্রই তা জানানো হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।
কলকাতার একটি নামী কলেজের এক শিক্ষিকা এ দিন বলেন, “তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয় জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে। কিন্তু পরিবর্তিত সূচিতে দেখা যাচ্ছে, পার্ট টু পরীক্ষা শুরুই হবে সেই সময়ে। তা হলে তৃতীয় বর্ষের ক্লাসটা শুরু হবে কবে? পাঠ্যক্রমই বা শেষ হবে কী করে?” পার্ট থ্রি পরীক্ষা হয় এপ্রিলে। এই পরীক্ষার পরে অনেক ছাত্রছাত্রীই স্নাতকোত্তরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদন জানান। সেখানে স্নাতক স্তরের নম্বর প্রয়োজন হয়। তাই ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবে পার্ট থ্রি পরীক্ষা বা ফলপ্রকাশ সময়মতো করতেই হয়। অথচ ক্লাস দেরিতে শুরু হলে পঠনপাঠনের সময় যায় কমে। ওই কলেজ-শিক্ষিকা বলেন, “তৃতীয় বর্ষে এমনিতেই ক্লাসের সময় সব থেকে কম। তার উপরে আরও কমে গেলে ভীষণ সমস্যায় পড়বেন শিক্ষক, ছাত্র সকলেই।” ছাত্রছাত্রীরাও এই ঘোষণায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, জুলাইয়ের মধ্যেই পার্ট টু জেনারেল পরীক্ষা শেষ করে ফেলা হবে। অগস্টের গোড়ায় তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু করা যাবে। ফলে পঠনপাঠনের দিন খুব একটা কমবে না। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের অনেকে আবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ না-হলে পরবর্তী ধাপের পড়াশোনায় মন দিতে চায় না। পরীক্ষা পিছোনোর ফলে ক্লাস দেরিতে শুরু হওয়ায় যতটা ক্ষতি হয়, তা থেকে বেশি প্রভাব পড়ে ফল দেরিতে বেরোলে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ফল প্রকাশ করা হবে।” তবে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের আগে ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। ধ্রুববাবু বলেন, “পরীক্ষা পিছোলেও শিক্ষা-ক্যালেন্ডার যত দূর সম্ভব মেনে চলার জন্য বিভিন্ন কলেজে আবেদন জানানো হবে।”
কল্যাণী, সিধো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যেই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকায় মঙ্গলবার পর্যন্তও পরীক্ষা পিছোনোর সিদ্ধান্ত নেয়নি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন কলেজে ইতিমধ্যেই পুলিশ ঢুকে পড়তে শুরু করেছে। কোথাও বা ১৭ জুন থেকে অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ-সব তথ্য জানার পরে আর ঝুঁকি না-নিয়ে পরীক্ষা পিছোনরই সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়।
|