যিনি রাঁধেন তিনিই চুল বাঁধেন। আক্ষরিক অর্থেই তাই। সকাল উঠে এক ঘণ্টা ‘জ্যাভলিন থ্রো’ অনুশীলন। সংসার সামলানো। তা শেষ হলে ভোটের প্রচারে গ্রামে চষে বেড়ানো।
এখন এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কোচবিহারের প্রত্যন্ত চিলকির হাটে হলদিমোহন গ্রামের বধূ জানকি বক্সি বর্মনের। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে এবারে তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী হয়েছেন। বছর ২২-এর তরুণী বধূ পর পর পাঁচবার ‘জ্যাভলিন থ্রো’য় জেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। কলকাতা, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ছিনিয়ে এসেছেন পদক। এবারে রাজনীতিতেও পদক আনতে চান তিনি। জানকি বলেন, “জ্যাভলিন থ্রো আমার প্রিয় খেলা। বলা যায় নেশা। রাজনীতিও করছি অনেকদিন ধরে। গ্রামের সকলে প্রার্থী হতে বলেন। শ্বশুরমশাই ও স্বামীও বাধা দেননি। খেলা, সংসার, রাজনীতি সব কিছু নিয়েই চলতে পারব।”
|
জানকি বক্সি বর্মন।
—নিজস্ব চিত্র। |
কোচবিহার বলরামপুরের বাসিন্দা জানকি প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকে ‘জ্যাভলিন থ্রো’ খেলায় জড়িয়ে পড়েন। এর পরে স্কুল, ক্লাব পর্যায়ে একের পর এক অংশ নিয়ে পুরস্কার, পদক জেতেন। ২০০৫ সাল থেকে টানা পাঁচ বার জেলা চ্যাম্পিয়ন হন। ২০০৯ সালে প্রতিযোগিতায় ইস্ট জোনে দ্বিতীয় হন। দেড় বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। হলদিমোহনের যুবক অশোক বক্সির সঙ্গে। দেওয়ানহাট কলেজ থেকে কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। গত বছর ছাত্র সংসদের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। জিতেও যান। তাঁর কথায়, “রাজনীতি ভাল লাগে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার প্রিয় নেত্রী। তাই ছোট স্তরে হলেও ভোট জিতে মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের কাজে সামিল হতে চাই।”
গ্রামে পরিবারের সম্বল বলতে ১৪ বিঘা জমি। শ্বশুরমশাই রামেশ্বরবাবু তা দেখাশুনো করে। স্বামী অশোকবাবুর বড়াইবাড়িতে ওষুধের দোকান রয়েছে। শাশুড়ি তারাময়ীদেবীর খুবই প্রিয় জানকি। রয়েছে ছোট দেওরও। তিনটি ছোট ঘরে বক্সি পরিবারের বসবাস। জানকি দেবীর শ্বশুরমশাই আর শাশুড়ি বলেন, “আমরা মনের মতোই বউ পেয়েছি। খেলা ছাড়াও বাড়ি সামলায়। ও ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হলে একটু সমস্যা হবে ঠিকই। তবে আমরা সকলে মিলে মানিয়ে নেব। ও মানুষের জন্য কাজ করুক।” অশোকবাবু বলেন, “মা এবং জানকি কাজ ভাগ করে করলে বাড়ির কাজে সমস্যা হবে না।”
জানকি বলেন, “এখন খুব ভোরে উঠতে হচ্ছে। অনুশীলন করে বাড়ির রান্নার কাজ সেরে খাবার খেয়ে গ্রামে বেরোই। প্রচারের কাজ চলে বিকাল অবধি। ফের বাড়িতে এসে সংসারের কাজ সামলাই।” তৃণমূলের কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি খোকন মিঁয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, “খেলাধূলায় ও যেমন সফল, আমি আশা করি তেমনই পঞ্চায়েতের কাজেও ও সফল হবে।” |