“ও—ই যে দেখছেন ঘরবাড়ি। ওটাই রামসাই। ওই যে টিনের ঘর। ওখানে যেতে হয় ভোট দিতে......।”
পাড়ে দাঁড়িয়ে আঙ্গুল তুলে সামনে দেখিয়ে বিড়বিড় করেন ভবানন্দ রায়। ঘরের দেখা মেলে না। সামনে পাহাড়ি নদী জলঢাকা। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে কাশবন। জেগে থাকা বালির চর। কোথাও জল ধারা ঝিলমিল করছে। দূরে যেখানে ষাটোর্ধ্ব ভবানন্দ দেখতে বললেন, সেটার শেষ প্রান্তে ঝাপসা কালো সরু রেখার মতো, যেমনটা ক্যানভাসে আঁকা ছবিতে থাকে।
তা কতটা দূর হবে? নিরুদ্বেগ ভবানন্দবাবু টাক মাথার পিছনে ঝুলে থাকা পাকা চুলে হাত বুলিয়ে বলেন, “কত আর হবে, ছয়-সাত কিলোমিটার।”
ময়নাগুড়ি ডোববাড়ির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের মতো সুরেন ওঁরাও, দেওয়ান মাঝিদের কাছে এটা তেমন কোনও দূরত্ব নয়। আড়াই কিলোমিটার দূরে কদমবাড়ি ঘাট থেকে নৌকায়, কিছুটা হেঁটে ওঁরা রামসাই পঞ্চায়েত অফিসে যেতে অভ্যস্ত। শহরের দিকে যাতায়াত করতে হয় ওই পথেই। বর্ষার সেটা সম্ভব হয় না। উথালপাথাল প্রবল স্রোতের জন্য নৌকা চলে না। বর্ষা আসতে এ বারও বাসিন্দাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। কিন্তু ভোট থাকায় সব দলকে নৌকার ব্যবস্থার জন্য তৎপর হতে দেখে অল্প স্বস্তি ফিরেছে এলাকায়। তাঁরা জানান, ফি বছর বলে কয়ে নৌকার ব্যবস্থা করতে হয়। এ বার চিন্তা কম। দলের নেতারা এসে নৌকার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন। স্থানীয় যুবক নিবারণ রায় ধানের খেতে কাজ করার ফাঁকে বলেন, “ফি বর্ষায় যদি ভোট হয়।”
ডোববাড়িতে ২০টি পরিবার বাস করেন। ১৬টি জনজাতি গোষ্ঠীর। নেই স্কুল, রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল। তবে এ সব আছে নদীর ও পারে। অভিযোগ করেন, ভোট এলে ৭২ জন ভোটারকে নিয়ে শুরু হয় টানাহ্যাঁচড়া। উন্নয়নের আশ্বাস মেলে। পরে ফিরে তাকায় না।
অভিযোগ, উড়িয়ে দিতে পারেননি রামসাই এলাকার সিপিএম ও তৃণমূল নেতারা। কৃষক সভার অঞ্চল সম্পাদক কেশব রায় বলেন, “ওখানে যাতায়াত কঠিন। মাঝেমধ্যে তো যাই।” কিষাণ তৃণমূল নেতা বাবলু রায় বলেছেন, “ভোটে নৌকার ব্যবস্থার কথা প্রশাসন কর্তাদের বলব।” তৃণমুল নেতা অনিরুদ্ধ গোস্বামী বলেন, “হড়পা বানে নৌকা চলে না। জল কমার অপেক্ষায় থাকতে হয়। ভোটকর্মীরাও সে ভাবে যাবেন।” বাসিন্দার আক্ষেপ, “ভোট এলে কত নেতা চরে যাতায়াত করেন। কেউ ফিরে দেখেন না। এ ভাবেই বেঁচে আছি।” |