হত্যা, অস্বাভাবিক মৃত্যু-সহ নানান রহস্যভেদে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট বড় সহায়। অথচ অনেক সময়েই সময়মতো সেই রিপোর্ট না-পাওয়ায় সত্য উদ্ঘাটনে দেরি হয়। অবশেষে এই সমস্যার সুরাহা হতে চলেছে। এ বার থেকে ঘটনার তিন দিনের মধ্যে মৃতের পরিবার ও তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের হাতে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট তুলে দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, এখন থেকে তিন দিনের মধ্যে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশ, গোটা রাজ্যে যত ময়না-তদন্ত বকেয়া পড়ে রয়েছে, আগামী তিন মাসের মধ্যে আইনসম্মত ভাবে তার রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। এই কাজ ঠিকমতো হল কি না, তিন মাস পরে হাইকোর্টকে তা লিখিত ভাবে জানানোর জন্য সরকারি আইনজীবী বিকাশ মুখোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
অভিযোগ ছিল, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক সময়েই বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায় না। ফলে পুলিশের তদন্ত এগোয় না, মৃতের পরিবারও বিচার পায় না। এর পরিণতিতে অপরাধীর ছাড়া পেয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। ময়না-তদন্ত ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা জানিয়ে স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেন। এই বিষয়ে হাইকোর্ট আগেও একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ১৯৪৩ সালের বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনের ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ময়না-তদন্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট লিখতে হবে ‘৫০ নম্বর বিপি ফর্ম’-এ। রিপোর্টের একাধিক প্রতিলিপি হবে। তা দিতে হবে তদন্তকারী অফিসারকে, দিতে হবে মৃতের পরিবারকেও। একটি থাকবে সরকারের কাছে। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ময়না-তদন্তের ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে সব রাজ্যের কাছে পাঠিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মানেনি। এ বার থেকে ওই নির্দেশিকা মেনে ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেন বিচারপতিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষমদ খেয়ে অথবা ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুনে পুড়ে মৃতদের ময়না-তদন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকা মেনে হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্বপনবাবু। এই প্রেক্ষিতে আবেদনকারীর আইনজীবী ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেতে এমনিতে দীর্ঘ সময় তো লাগেই। তার উপরে অনেক সময়েই সেই তদন্ত নিয়ম মেনে হয় না। ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, ময়না-তদন্ত এবং ফরেন্সিক মেডিসিনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব হাসপাতালের সুপার ও প্রধান চিকিৎসকের কাছে ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের প্রতিলিপি অবিলম্বে পাঠিয়ে দিতে হবে। |