নির্দিষ্ট তারিখে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না। আর সেই সংশয়ই কলকাতা-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের পরীক্ষার দিন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। নির্বাচন যদি নির্ধারিত সময়ে হয়, পরীক্ষা পিছোবে। কিন্তু সময়মতো নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েই এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাই নিশ্চিত ভাবে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানাতেও পারছে না। এই দোলাচলে ভুগতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। পরীক্ষার প্রস্তুতির তুলনায় পরীক্ষাটা কবে হবে, সেটাই এখন বেশি ভাবাচ্ছে তাঁদের।
২, ৬ এবং ৯ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ১৩ জুলাই ফল ঘোষণার দিন স্থির হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজিয়া চলছে তো চলছেই। পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়। তাই নির্ধারিত দিনে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সংশয় থেকেই গিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টু জেনারেল পত্রের লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১৮ জুন। কিন্তু তা নির্দিষ্ট সূচি মেনে হবে কি না, তা নির্ভর করছে নির্বাচনের কাজে কলেজ ভবন অধিগ্রহণ করার উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক মঙ্গলবার বলেন, “কলেজগুলি কবে থেকে অধিগ্রহণ করা হবে, জানা যাচ্ছে না। তবে পরীক্ষার কাজের জন্য ২৬ জুন পর্যন্ত কলেজগুলিকে যাতে ছাড় দেওয়া হয়, জেলা প্রশাসনের কাছে সেই আবেদন জানাতে বলা হয়েছে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে।” যদিও এতে বিশেষ সাড়া মিলবে বলে আশা করছেন না বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ।
তা হলে পরীক্ষা কবে হবে?
ওই আধিকারিক বলেন, “নির্বাচন নিয়ে এতটা অনিশ্চয়তা আগে দেখা যায়নি। তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আগেভাগে পরীক্ষা পিছোনো হল, অথচ নির্বাচনটাই নির্ধারিত দিনে হল না এমনটা হলে তো বিনা কারণে বেশ কিছু দিন নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে, পরিস্থিতি না-দেখে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপায় নেই।” পরীক্ষা শেষ হলে পরের বছরের ক্লাস শুরু হয়। এই সংশয়ের জেরে ক্লাস শুরু নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
২০০৯-এর লোকসভা, ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনেরও প্রভাব পড়েছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায়। তার দু’বছরের মাথায় ফের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জেরে পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “প্রতি দু’বছরে এক বার নির্বাচন হয়। তার জেরে পরীক্ষা পিছোয়। এর প্রভাব পড়ে ক্লাসে, পঠনপাঠনের উপরে। ভুগতে হয় ছাত্রছাত্রীদেরই।” ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ২১ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তা মাসখানেক পিছিয়ে ১৯ জুলাই শুরু হবে বলে জানান রেজিস্ট্রার উৎপল ভট্টাচার্য। সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষার দিন পিছোনো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে জানান, ২, ৩ এবং ৪ জুলাইয়ের বদলে পরীক্ষা হবে মাসখানেক বাদে ২, ৩ এবং ৫ অগস্ট।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ থেকে ২৭ জুন অনার্সের পরীক্ষা হওয়ার কথা। তার পরে শুরু হবে জেনারেল পত্রের পরীক্ষা। অনার্সের পরীক্ষাগুলি যাতে নিয়ে নেওয়া যায়, সেই জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও পরীক্ষা পিছোনোর সিদ্ধান্ত নেননি। তবে নির্বাচন সময়মতো হলে তাঁদেরও পরীক্ষা পিছোতে হতে পারে বলে কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা। এক আধিকারিক বলেন, “১৮ জুন পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ১৭ তারিখ থেকেই কলেজগুলি অধিগ্রহণ করা হতে পারে বলে শুনছি। ১৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব থেকে বড় পরীক্ষা আছে। ওই পরীক্ষা পিছোতে হলে ভীষণ মুশকিলে পড়তে হবে।” গৌড়বঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়েও একই রকম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে সেখানেও পরীক্ষা পিছোনো নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ জারি করা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার উপরে অবশ্য নির্বাচনের কোনও প্রভাব পড়ছে না। কারণ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। আর রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরুই হবে ১৩ জুলাইয়ের পরে। |