পঞ্চায়েত নির্বাচন
বিরোধীহীন আসনের একটা
বড় অংশই মহিলাদের, বলছে কমিশন
প্রথম পর্বে যে নয়টি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে সেখানে বিভিন্ন দলের ৫ হাজার ২৫৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্ব শেষ হওয়ার পরে এই তথ্য জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তাঁদের বড় একটা অংশ মহিলা বলেই প্রাথমিক সমীক্ষার পরে মনে করছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফলে মহিলা প্রার্থী চিহ্নিত করতে পারার অক্ষমতাই অনেক দলের প্রার্থী দিতে না পারার কারণ কি না, সে প্রশ্ন উঠে গেল।
কমিশনের সচিব তাপস রায় এদিন বলেন, “যেখানে যেখানে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় জয় বেশি, সেই আসনগুলির বেশির ভাগই মহিলা সংরক্ষিত বলেই ধারণা।” কেন পর্যাপ্ত সংখ্যায় মহিলা প্রার্থী পাওয়া গেল না তা পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরা তদন্ত করে দেখবেন বলে কমিশন সূত্রে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে।
তাই সন্ত্রাসের অভিযোগ থাকলেও, যথাযথ মহিলা প্রার্থী পাওয়ার ব্যর্থতাকেই বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে না-পারার কারণ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়া ৫ হাজার ২৫৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ঠিক কতজন মহিলা সেই সংখ্যা পেলেই তার কারণ অনুসন্ধান করবে কমিশন।
কমিশনের ব্যাখ্যা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না রাজনৈতিক দলগুলিও। ভারতের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সভানেত্রী শ্যামলী গুপ্ত বলেন, “যদি দেখা যায় বামপন্থী প্রার্থীরা মনোনয়ন দিয়েও প্রত্যাহার করেছেন, তাহলে স্পষ্ট হবে রাজনৈতিক চাপের ফলে এমন ঘটেছে। আর বিরোধী সব দলই যদি প্রার্থী না দিতে পারে, তা হলে পারিবারিক ও সামাজিক চাপ কাজ করেছে বুঝতে হবে।”
কোনও কোনও দলের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য স্পষ্টই তাঁদের মহিলা শাখার সাংগঠনিক দুর্বলতা স্বীকার করে নিচ্ছেন। উত্তর ২৪ পরগণার জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবী ঘোষাল বলেন, “এই জেলায় দু’হাজারেরও বেশি আসন মহিলা সংরক্ষিত। এই আসনগুলিতে আমরা অনেক কম প্রার্থী দিতে পেরেছি।” কারণ হিসাবে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাই উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে মহিলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী কৃষ্ণা দেবনাথ সন্ত্রাসকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। “শাসকদলের হুমকি, শাসানিতে কংগ্রেসের অনেক মহিলাই ঘরছাড়া, গ্রামছাড়া। সব মহিলা পদে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে পারেনি, তবে অনেক চাপের মুখেও খুব বেশি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি আমাদের প্রার্থীরা।” তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেছেন, “মনে হচ্ছে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো মহিলা প্রার্থী হয়তো সেই রাজনৈতিক দল খুঁজে পায়নি।”
সিপিএম-এর প্রাক্তন বিধায়ক মালিনী ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, নির্বাচন কমিশন যা সন্দেহ করছেন, তা ঠিক নয়। “রাজনীতি-নির্বিশেষে মহিলারা দিতে পারছেন না, এমন নয়। শাসক দলই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে। মেয়েদের রাজনীতি করায় এমনিই অনেক অসুবিধা, এটা একটা বাড়তি অসুবিধা। তবে সংরক্ষণ একটা দরজা। সেটা খোলা থাকলেও মেয়েরা ঘরের ভিতরের সব জিনিসে অধিকার পায় না। অনেক লড়াই করে তাদের নিজেদের ক্ষমতা আদায় করতে হয়েছে। সংরক্ষণ না থাকলে অবশ্য এটুকুও হত না।”
প্রথম দফায় যে নয়টি জেলায় নির্বাচন হবে সেগুলি হল উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। এই জেলাগুলির ৩০ হাজার ৫৮১ টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৪ হাজার ৫১৯ টি- তে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। হুগলিতে ১ হাজার ২৭৯ টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে সংখ্যাটা ৯৪৫। বর্ধমানে ৮১১। বাঁকুড়ায় ৫৪৮ টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন।
প্রথম পর্বে পঞ্চায়েত সমিতির যে ৫ হাজার ৭৯২ টি আসনে ভোট হবে তার মধ্যে ৭৩২ টি আসনে প্রার্থীা বিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। এর মধ্যে হুগলিতে সংখ্যাটা ২১৭ (২০০৩ সালে ছিল ২৩৯), পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৩৩ (১৮৪), বর্ধমানে ১২৬ (২০৬) এবং বাঁকুড়ায় ১০৯ (১২৫)। প্রথম পর্বে জেলা পরিষদের যে ৫১৪ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা তার মধ্যে আটটি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে হুগলির ৬ টি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুটি আসন।
২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১১ শতাংশ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে বামফ্রন্টের প্রার্থীরাই চিলেন শতকরা ৯৫ জন। প্রথম পর্বের যে ৯ টি জেলার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোট হবে সেখানে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরে দেখা যাচ্ছে, সাড়ে ১২ শতাংশ আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। এর মধ্যে শাসক তৃণমূলের প্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তবে হাওড়ায় ১৩৯ টি আসনে জিতেছেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশন সূত্রে বলা হয়, হুগলি, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ায় ক্ষেত্রে ১৪.৭ শতাংশ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। এই পরিসংখ্যান কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে কমিশনের। কমিশনের একটি সূত্র বলেন, রাজ্যের ১৭ টি জেলায় কত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জিতেছেন তার চিত্রটা পরিষ্কার হবে ১৬ জুন। ওই দিন তৃতীয় পর্বে যে চারটি জেলায় ভোট হচ্ছে সেখানে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের কাজ শেষ হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.