ফের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ
নারী নিগ্রহ নিয়ে খারিজ রাজ্যের যুক্তি
বারেও প্রথম।
মহিলাদের উপরে অত্যাচারের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ সবার উপরে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো (এনসিআরবি) মঙ্গলবার রাতে দেশের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জি প্রকাশ করেছে। তা থেকেই মিলেছে ওই তথ্য। তবে রাজ্য সরকারের যুক্তি, এ রাজ্যে অভিযোগ নথিভুক্তির হার অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে বেশি। সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে পরিসংখ্যানে।
এনসিআরবি-র তথ্য বলছে, ২০১১ সালে এ রাজ্যে মহিলাদের উপরে অত্যাচার সংক্রান্ত ২৯,১৩৩টি মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই সূত্রে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল পশ্চিমবঙ্গ। ২০১২-তে সেটাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০,৯৪২-এ। এবং এ বারেও সেই প্রথম স্থানই ধরে রেখেছে এ রাজ্য। তবে গত বছরের তুলনায় এ বার পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা কমেছে বলে জানিয়েছে এনসিআরবি। তাদের হিসেবে, ২০১১-তে যেখানে পশ্চিমবঙ্গে ২,৩৬৩টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছিল, ২০১২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২,০৪৬টি মামলায়।
বারাসতের এক তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় যখন রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ চলছে, তখন এনসিআরবি-র এই তথ্য সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, গত এক বছরে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিল রাজ্যের রাজনীতি। পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের ঘটনাকে ঘিরে আমজনতার প্রতিবাদ রাজনীতির বৃত্তকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। বরাহনগরে লরিতে তুলে নিয়ে ধর্ষণ এবং পরে মহিলার মৃত্যু, কাটোয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে নামিয়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনাতেও কম তোলপাড় হয়নি রাজ্য। কেন্দ্রীয় সংস্থার এই সাম্প্রতিক তথ্য শাসক ও বিরোধী দলের সেই তরজাকেই উস্কে দেবে বলে মত ওই পুলিশ কর্তাদের।
অথচ, গত এক বছর ধরে এনসিআরবিকে দফায় দফায় চিঠি লিখে নিজেদের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করে গিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্য বলেছিল, কেবল পরিসংখ্যান দিয়েই মহিলাদের উপরে অত্যাচার বৃদ্ধির বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। সামাজিক স্বাধীনতাও এর অন্যতম কারণ। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে রাজ্য পুলিশের সওয়াল ছিল, অন্য রাজ্যে মহিলাদের উপরে অত্যচার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা থানায় যেতে সাহস পান না। সমাজও তা ভাল চোখে দেখে না। তুলনায় এ রাজ্যের মহিলারা স্বচ্ছন্দেই থানায় যেতে পারেন। পুলিশও সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ নথিভুক্ত করে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও অনেক বেশি সক্রিয়। তারাও মহিলাদের উপরে হওয়া অত্যাচার নিয়ে জনমত তৈরি করে। এমনকী, আদালতের নির্দেশেও দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা কম নয়। এ সব কারণেই এই রাজ্যে মহিলাদের উপরে অত্যচারের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। বিধানসভায় দাঁড়িয়েও এ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু রাজ্য সরকারের ওই আর্জি মানতে চায়নি এনসিআরবি। পাল্টা চিঠি লিখে তারা রাজ্যকে জানিয়েছিল, দেশ জুড়ে নানা ধরনের অপরাধ এবং পুলিশি সাফল্য-ব্যর্থতার যে তথ্যনির্ভর চিত্র তুলে ধরা হয় সেখানে প্রেক্ষিত জানানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ যা-ই হোক না, মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা যে পশ্চিমবঙ্গে বেশি, সেটাই পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়েছে।
ওই চিঠি পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্য ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এসসিআরবি)-কে জানানো হয়, অপরাধের তথ্যপঞ্জি সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো যাবে না। তার আগে মহাকরণের ‘সবুজ সঙ্কেত’ নিতে হবে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “নিচুতলায় অপরাধের খুঁটিনাটি জোগাড় করতে আছে জেলা ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (ডিসিআরবি)। তাদের দেওয়া তথ্য মাসে এনসিআরবি-র কাছে পাঠায় এসসিআরবি। কিন্তু সেই তথ্য দিল্লিকে সরাসরি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জুন থেকে সব অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য এসসিআরবিতেই জমে ছিল।” সাধারণ ভাবে মে-জুন মাসে দেশের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জি প্রকাশ করে এনসিআরবি। ওই সংস্থার এক কর্তা বলেন, “প্রতি মাসের শেষে জেলাওয়াড়ি তথ্য পাঠায় রাজ্যগুলি। মার্চের মধ্যেই চলে আসে গোটা বছরের সংগৃহীত তথ্য। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথ্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে একাধিক বার চিঠি লেখার পরে ডিসেম্বরে সাত মাসের তথ্য পাঠায় তারা।” মে-র গোড়ায় বছরের অপরাধ সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠানো হয় এনসিআরবি-র কাছে। রাজ্য এনসিআরবি-র কাছে আর এক দফা আর্জি জানিয়ে বলে, বিভিন্ন আদালতে মহিলাদের উপরে অত্যাচার সংক্রান্ত যে অভিযোগ জমা পড়ে, তা থানায় দায়ের হওয়া মামলার সমতুল নয়। বহু ক্ষেত্রে তা কোর্টে মিথ্যে প্রমাণিত হয়। সহমতে সহবাসের পরে ধর্ষণের মামলাগুলিকেও একই শ্রেণিতে না ফেলার আর্জিও জানায় রাজ্য। কিন্তু তা-ও খারিজ করে দেয় এনসিআরবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.