ব্যারাকপুরের সদর বাজার ও মণিরামপুর এলাকায় অন্তত সাতটি জুয়ার বোর্ড চালাত শিবু যাদব। বেশির ভাগ জুয়ার বোর্ড বসানো হত এলাকার কয়েকটি ক্লাবে। জুয়ার লক্ষ লক্ষ টাকা নিজের কব্জায় রাখতে শিবু প্রভাবশালী মহলে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ করত বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ।
ব্যারাকপুরের এক পুলিশকর্তা মঙ্গলবার জানান, শিবুর হয়ে জুয়ার কাজকর্ম দেখত জিতুলাল তাঁতি (২৬)। জুয়ার টাকার ভাগ নিয়ে জিতুর সঙ্গে শিবুর কোনও গোলমাল হয়েছিল কি না, জিতু খুনের পরে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে ব্যারাকপুরের মণিরামপুর এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা জিতুকে বোমা মেরে এবং গুলি করে খুন করা হয়। তার জেরেই ওই এলাকায় তৃণমূল নেতা ও ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিবুর দলবল ওই রাতে এবং পরের দিন সকালে তাণ্ডব চালায়। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা অবশ্য পরে শিবুর সঙ্গে দলের কোনও যোগাযোগ নেই বলেই দাবি করেন। হাঙ্গামার পরেই শিবুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও শিবু ধরা পড়েনি।
পুলিশি সূত্রের খবর, ব্যারাকপুরের সদর বাজার, মণিরামপুর অঞ্চলের বেশির ভাগ জুয়ার বোর্ডই নিয়ন্ত্রণ করত শিবু। নিজের বাড়ির পাশে দলীয় পার্টি অফিস করে সেখানেও বোর্ড বসাত সে। এলাকার বিভিন্ন ক্লাবেও রাতে চলত জুয়া। তবে জুয়ার আসর চালাতে শিবুকে অনেকটাই নির্ভর করতে হত জিতুর উপর। কারণ, টাকা আদায় করতে জিতুই যেত জুয়ার নানা আড্ডায়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকার তৃণমূল নেতা রবীন ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ লাল্টু নামে এক যুবকই শিবুর সঙ্গী জিতুকে খুন করেছে। ওই এলাকায় সিন্ডিকেট ব্যবসা-সহ নানা ব্যাপারে শিবু ও লাল্টুর দলবলের গোলমাল ছিল। কিন্তু জুয়ার বোর্ডের তথ্য সামনে আসায় এই খুন নিয়ে অন্য সম্ভাবনার কথাও ভাবছেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের বেশির ভাগই জেল-হাজতে থাকায় তদন্তে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সোমবার পুলিশ ব্যারাকপুর জেলে গিয়ে ধৃতদের নতুন করে জেরা করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সব যুবকের কাছ থেকেই শিবুর জুয়ার বোর্ড সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য মিলেছে। পুলিশের এক কর্তা জানান, জিতুর সঙ্গী সঞ্জয় মণ্ডলকেও জেলে জেরা করতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সামনে এসেই সঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে তাকে জেরা করতে পারেননি তদন্তকারী অফিসারেরা।
কোথায় পালাল শিবু? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শিবু বিহারে তার কোনও ঘনিষ্ঠের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছে। ফলে তল্লাশির জন্য বিহারেও দল পাঠাচ্ছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। শিবু ও তার ঘনিষ্ঠদের মোবাইল ফোনের কল-লিস্ট বার করে সেখান থেকেও তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানায়, শিবু দু’টি মোবাইল ব্যবহার করত। একটি বিএসএনএল এবং অন্যটি বেসরকারি সংস্থার লাইন। পুলিশ দু’টি সংস্থার কাছ থেকেই শিবুর মোবাইলের কল-লিস্ট চেয়েছে।
ব্যারাকপুরে হাঙ্গামার প্রতিবাদে এ দিন জেলা কংগ্রেস ও বিজেপি-র পক্ষ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ-সভা হয়। পরে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সম্রাট তপাদার বলেন, “ব্যারাকপুরের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে আমরা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ চেয়েছি।”
|