ভোটের দাঙ্গা থেকে মাথা বাঁচাতে খরচ মাত্র ১৫০ টাকা। ওই দেড়শো টাকা খরচ করে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। প্রার্থী হলে তাঁকে আর ভোটকর্মী হতে বাধ্য করা যায় না। নির্বাচন বিধির ওই ফাঁক গলে এ বার মুর্শিদাবাদ জেলায় হাজারেরও বেশি শিক্ষক নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক অফিসার বলেন, “এ জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এ বার নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা ১৭৭২। সে ক্ষেত্রে আর এস পি-র প্রার্থী সংখ্যা ৬৯৬, বি জে পি-র প্রার্থীর সংখ্যা ৫৯৭। অন্য হিসাবে সিপিএমের প্রার্থীর থেকে অর্ধেক আর কংগ্রেসের প্রার্থী সংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি নির্দল প্রার্থীর সংখ্যা। নির্দল প্রার্থীদের অধিকাংশই পেশায় শিক্ষক।” এ কারণে ভোটকর্মীর সংখ্যায় টান পড়বে কি? পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মুর্শিদাবাদ জেলা আধিকারিক দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, “ভোটকর্মী নিয়ে কী রকম সমস্যা দেখা দেবে, তা জানা যাবে ২০-২২ জুন প্রশিক্ষণ শিবিরা শুরু হলে। তখন সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ডোমকল থানার বর্তনাবাদ হাইস্কুলের মোট শিক্ষক ৯ জন। তার মধ্যে ৬ জন শিক্ষকই মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম আনারুল ইসলাম। বর্তনাবাদ গ্রামে বাড়ি। তিনি বলেন, “দেড়শো টাকা জমা দিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়পত্র জমা দিয়েছি।” কেন? তাঁর সাফ কথা, “ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই। নিরাপত্তা কোথায়? কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে বুকে বল আসে। সাহস পাই। কিন্তু সেই নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রার্থী হয়েছি।” ডোমকল মহকুমার রানিনগর থানার বাবুলতলি খলিলুর রহমান হাইস্কুলের মোট ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে পঞ্চায়েত এলাকায় বাস করেন ৮ জন। ওই স্কুলের শিক্ষক অনীক হাজরা বহরমপুর পুরসভা এলাকার ভোটার। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের যে ৮ জন শিক্ষক পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন তার মধ্যে ৬ জনই ভোটে দাঁড়িয়েছেন।”
সাগরদিঘি থানার বোখরা হাজি জুবেদ আলি বিদ্যাপীঠের ১৪ জন শিক্ষক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে ৮ জন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ওই স্কুলের শিক্ষক বিমানেশ মণ্ডলের বাড়ি বহরমপুর থানার মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। তিনি বলেন, “ভোটকর্মী হতে হবে ভেবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষকরা। ভোটকমীর চেয়ে ভোটপ্রার্থী হওয়াই অনেক ভাল।” ভোটের দাঙ্গা এড়াতে ভোটের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে হাইস্কুল শিক্ষকের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা। এবিপিটি-র জেলা সম্পাদক তরুণ দাস বলেন, “ভোটকর্মী হতে সংগঠনগত ভাবে আমরা উৎসাহ দিচ্ছি না, অনুৎসাহিতও করছি না। কারণ, অন্য বারের থেকে এ বার নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের টানোপোড়েনেই তা পরিষ্কার।”
এবিটিএ-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি বদরুদ্দোজা খান বলেন, “ভোটকর্মী শিক্ষকদের কেউ কেউ ভোটের আগের দিন অসুস্থ সেজে হাসপাতালে-নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন। এ সব ভাবনা নিরাপত্তাহীনতা থেকেই।” আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন ডব্ললিউবিটিএ-র ডোমকল মহকুমার সাধারণ সম্পাদক অশেষকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, “উপযুক্ত নিরাপত্তা না দিতে পারলে, শিক্ষকদের ভোটপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার
দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।”
ওয়েস্ট বেঙ্গল তৃণমূল সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি শেখ ফুরকান অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তাই সব শিক্ষকের প্রতিই আমাদের আবেদন, তাঁরা যেন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।”
|
মুর্শিদাবাদ |
গ্রাম পঞ্চায়েত
আসন: ৪২৪৭ মনোনয়ন জমা: ১৬৫৩০, সিপিআইএম: ৩৪৮০, কংগ্রেস: ৪৪৭৮, তৃণমূল: ৪৪০৮, আরএসপি: ৬৪৮, ফরওয়ার্ড ব্লক: ১৯৫, সিপিআই: ৬৪, বিজেপি: ৫৮৭
পঞ্চায়েত সমিতি
আসন:৭৪৮ মনোনয়ন জমা: ৩২৪২, সিপিআইএম: ৬৪৩, কংগ্রেস: ৮৭২, তৃণমূল: ৮৭৫, আরএসপি: ১১৩, ফরওয়ার্ড ব্লক: ৩২, সিপিআই:১১, বিজেপি: ১৩৬
জেলা পরিষদ
আসন: ৭০ মনোনয়ন জমা:৪৭৭, সিপিআইএম: ৫৫, কংগ্রেস: ৮১, তৃণমূল: ১০৯, আরএসপি: ১৩, ফরওয়ার্ড ব্লক: ৩, সিপিআই:২ বিজেপি: ৩৯ |
নদিয়া |
গ্রাম পঞ্চায়েত
আসন: ৩২৪৬ মনোনয়ন জমা: ১০৪২৫, সিপিআইএম: ৩০২১, কংগ্রেস:১৯৭৯, তৃণমূল: ৩৩৪০, আরএসপি: ৭৭, ফরওয়ার্ড ব্লক: ৩৬, সিপিআই:৩৭, বিজেপি: ১০৫৯
পঞ্চায়েত সমিতি
আসন: ৫৪৭ মনোনয়ন জমা: ২০৬৪, সিপিআইএম: ৫৩৩, কংগ্রেস: ৪১৪, তৃণমূল: ৬২৮, আরএসপি: ১০, ফরওয়ার্ড ব্লক: ৮, সিপিআই: ১২, বিজেপি: ২৬৭
জেলা পরিষদ
আসন: ৪৭ মনোনয়ন জমা: ২৬৪, সিপিআইএম: ৪৫, কংগ্রেস: ৪১, তৃণমূল: ৫৩, আরএসপি: ১, ফরওয়ার্ড ব্লক: ০, সিপিআই: ১ বিজেপি: ৪৮
মনোনয়ন পরীক্ষা হবে আজ। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৫ জুন। |
|
সন্ত্রাসের নালিশ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে
নিজস্ব সংবাদদাতা • রঘুনাথগঞ্জ |
গিরিয়া ও সেকেন্দ্রা গ্রাম পঞ্চায়েতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ আনল সিপিএম ও তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য শেখ ফুরকান বলেন, “রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের ওই দু’টি পঞ্চায়েতে কংগ্রেস আমাদের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে। তাই গিরিয়ায় ৩টি ও সেকেন্দ্রায় ১০টি আসনে প্রার্থী দিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, “কংগ্রেসের হুমকিতে আমরা গিরিয়ায় কোনও আসনেই প্রার্থী দিতে পারিনি। সেকেন্দ্রায় ১২টিতে প্রার্থী দিয়েছি।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ব্লক কংগ্রেসের সম্পাদক প্রকাশ সাহা বলেন, “তৃণমূল ও সিপিএমের জনভিত্তি নেই। সহানুভূতি পেতে সন্ত্রাসের গল্প ফাঁদা হচ্ছে।” |