ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন সীমান্তের গ্রামে
বারাসতের পরে এ বার নদিয়ার গেদে সীমান্ত। এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল কৃষ্ণগঞ্জের সীমান্ত সংলগ্ন একটি গ্রামের। অভিযুক্ত প্রতিবেশী যুবকের নাম বিমল সর্দার। মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাঁশবাগানের ভিতর থেকে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ গেদে এস কে
ধৃত যুবক
বিমল সর্দার।
এম হাইস্কুলের ওই ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে বিমল ও তার দুই বন্ধু গ্রামেরই ভিতরে একটি বাঁশবাগানের ভিতরে তাকে ধর্ষণের পর খুন করে ফেলে রাখে। ছাত্রীটিকে ধর্ষণের পরে শ্বাসনালি কেটে খুন করা হয়েছে। তার সারা শরীরে ছিল অত্যাচারের চিহ্ন।
মঙ্গলবার বিমলই গ্রামবাসীদের ডেকে মৃতদেহটি দেখায়। কিন্তু তার আচরণে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। বিমলকে তারা চেপে ধরে। এরই মধ্যে গ্রামবাসীরা জানতে পারেন যে, সোমবার বিকেলে বিমলের সঙ্গেই শেষ বার দেখা গিয়েছে ওই ছাত্রীকে। এরপরেই উত্তেজিত গ্রামবাসীরা বিমলকে মারধর শুরু করে। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে তাকে টেনে বার করে এনে ফের মারধর শুরু করে। শেষপর্যন্ত কোনও মতে বিমলকে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। পরে ওই ছাত্রীর বাড়ির অভিযোগের ভিত্তিতে বিমলকে গ্রেফতার করা হয়। জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।”
অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর।—নিজস্ব চিত্র।
ওই ছাত্রীর বাবা বছর দশেক আগে আত্মহত্যা করেছেন। মা মূক ও বধির। দাদা গেদে সম্মিলনী হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। প্রচন্ড অভাবের সংসার চলে পুঁতির মালা গেঁথে। পাশেই মামার বাড়ি। ছাত্রীটি বেশিরভাগ সময় মামার বাড়িতেই থাকত। সোমবার সে বাড়ি না ফেরায় কেউ দুশ্চিন্তা করেনি।
দেহ উদ্ধারের পরে স্থানীয় কিছু যুবক বিমল ও তার আত্মীয়স্বজনের বাড়ি ভাঙচুর করে। অভিযোগ এরপর স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ওই গ্রামবাসীরা গোটা পনেরো আদিবাসী পরিবারকে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়ে ও গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার ফতোয়া দেয়। তাতে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে আদিবাসী পরিবারগুলো। স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূলের মাটিয়ারি বানপুর অঞ্চলের দুই নম্বর সেক্টর সভাপতি চন্দন বিশ্বাস বলেন, “গ্রামের মানুষের বিশ্বাস বাকি আদিবাসী পরিবারগুলোও বিষয়টি জানত। তাই তাদের বিরুদ্ধেও একটা জনরোষ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া এই আদিবাসী পরিবারের লোকজন প্রতিদিনই নেশা করে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করে গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করে।” চন্দনবাবু বলেন, “সেই কারণেই আমরা ওদেরকে বলেছি গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে।” মাটিয়ারি বানপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “গ্রামের নেতৃত্বকে পরিস্কার বলে দিয়েছি, এই ধরনের কাজ কখনওই করা যাবে না।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “যারা এই ধরনের গণ আদালত করে তাদের সঙ্গে তৃণমূলের সংস্রব থাকবে না। আমাদের দল যেমন এই ধরনের নৃশংস ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের চরম শাস্তির দাবি করে, তেমনই যারা আইন হাতে তুলে নেয় তাদেরও প্রশ্রয় দেয় না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিমল মাস সাতেক আগে বিয়ে করেছে। আর এক যুবক গেদের পাশেই হারিশপুরে শ্বশুরবাড়িতে এসেছিল। তবে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকদের সামনে উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। বিমলের সঙ্গে ছাত্রীটিকে দেখা গিয়েছিল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ। তা হলে তারপর থেকে রাত পর্যন্ত ছাত্রীটি কোথায় ছিল? দিনের বেলা জনবহুল এলাকা দিয়ে ওই বাঁশবাগানে ছাত্রীটিকে জোর করে নিয়ে গেলে তা গ্রামবাসীদের চোখে পড়ত। তদন্তকারী এক পুলিশ আধিকারিকের প্রশ্ন, তা হলে কি ছাত্রীটিকে কোনও মাদক খাওয়ানো হয়েছিল? তবে ওই ছাত্রীর দেহ ময়নাতদন্ত হলে ঘটনাটি আরও পরিষ্কার হবে বলে পুলিশ মনে করছে। দিব্যজ্যোতিবাবু বলেন, “আমরা সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের পাশাপাশি তদন্তের অন্য দিকগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “রাজ্য জুড়ে তৃণমূল যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, এটা তারই প্রতিফলন।”
টিনের নড়বড়ে ঘরটির সামনে মঙ্গলবার দুপুরেও এলোমেলো ভাবে পড়েছিল এঁটো বাসন। এক কোনে ঝুলছিল তেলচিটে ছেঁড়া গামছা। ঘরের সামনে বসেছিলেন ছাত্রীটির মূক-বধির মা। পরনে শতছিন্ন শাড়ি অপুষ্টিতে ভোগা শরীরটা কিছুতেই যেন নড়তে চাইছিল না। কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে গিয়েছে চোখের জল। কথা বলতে না পারা মানুষটার সমস্ত যন্ত্রণা যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল চোখ দুটো দিয়েই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.