এই জাডেজাই এক সময়
স্পিন করা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল
লেখাটা শুরু করতে চাই আমার ব্যক্তিগত একটা অনুভূতি দিয়ে। ইংল্যান্ডে এটাই আমার প্রথম আসা নয়। আগেও বহু বার এসেছি। কিন্তু মঙ্গলবারের ওভাল কোথাও যেন আমার কাছে আলাদা হয়ে থাকল। এমন কিছু অনুভূতির খোঁজ পেলাম, যা বোধহয় সারা জীবনে ভুলতে পারব না।
ভাবুন তো, বিলেতের মাঠে বসে যদি আপনি নিজের শিষ্যের নামে মিনিটে-মিনিটে গর্জন শোনেন, কতটা গর্ব হয়? জাডেজা আজ যখন এক-একটা করে উইকেট তুলছিল, অসম্ভব ভাল লাগছিল। ভাল লাগছিল এটা ভেবে যে, ছেলেটার নামে আজ যে কারণে জয়ধ্বনি উঠছে, তার মধ্যে পরোক্ষে কোথাও তো আমিও রয়ে গেলাম!
বললে বিশ্বাস করবেন না, যে জাডেজা ওভালে পাঁচ উইকেট নিল, সেই জাডেজাই বছরকয়েক আগে স্পিন বোলিং একদম বন্ধ করে দিয়েছিল!
বছর দু’য়েক আগের কথা। জাতীয় দল থেকে জাডেজা বাদ পড়েছে। আমি সৌরাষ্ট্রতে রঞ্জি ট্রফির জন্য ছেলেদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। দেখলাম, হঠাৎ এসে হাজির। অনর্গল ইয়ার্কি মারত যে ছেলে, তাকে দেখলাম কেমন যেন চুপচাপ। বিশেষ কথা-টথা বলছে না। নেটে জাডেজাকে ডেকে সে দিন বলেছিলাম, তোমার মনে আছে কেন ইন্ডিয়া টিমে ঢুকেছিলে? বলল, হ্যাঁ। মরসুমে ৪২-৪৩-টা উইকেট নিয়েছিলাম বলে। ওকে তখন মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে, ব্যাটিং নিয়ে বেশি ভাবতে গিয়ে বোলিংটাই বন্ধ করে দিচ্ছো। যে বোলিং তোমার ভারতীয় টিমে ঢোকার পাসপোর্ট ছিল। বললাম, তুমি ভুলে যাচ্ছ যে, তোমার জার্সির পিছনের ট্যাগ-টা একজন বোলারের। ব্যাটসম্যানের নয়। যাও, নেটে গিয়ে আজ থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোলিং করবে।
পরের দিন থেকে কী দেখলাম জানেন?
সকালে প্র্যাক্টিস ডেকেছিলাম। গিয়ে দেখি কেউ আসেনি। এক জাডেজা বাদে। একা-একা নেটে লেংথ ঠিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সে দিন আর কিছু বলিনি। শুধু দেখলাম, সবাই যখন নেট করে চলে গেল জাডেজা তখনও পড়ে আছে। একটু ব্যাট করছে। কিন্তু পুরো ফোকাসটাই বোলিংয়ে। ওর এই নিষ্ঠা কিন্তু শেখার মতো। জাডেজা জানে, ওর হাতে বিশাল কিছু বৈচিত্র নেই। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্রেফ উইকেট টু উইকেট বল করে যেতে পারে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যেটা অসম্ভব কাজে দেয়। ও জানে যে, ওয়ান ডে বা টি টোয়েন্টিতে একটা সময় ব্যাটসম্যান ধৈর্য হারিয়ে ঝুঁকি নিতে যাবেই। ও অপেক্ষা করে থাকে ওই ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’-টার জন্য। জানে, একটা বল ব্যাটে লাগবে, একটা বাউন্ডারিও হবে, কিন্তু তার পরেই ব্যাটসম্যান লাইন মিস করবে। পরিণতি, এলবিডব্লিউ বা বোল্ড। মঙ্গলবারও পাঁচটা উইকেটের মধ্যে দু’টো এলবিডব্লিউ, একটা বোল্ড।
আসলে একজন স্পিনার যদি নেটে রোজ ঘণ্টা দু’য়েক প্র্যাক্টিস না করে, সে লাইন-লেংথ হারাতে বাধ্য। তুমি নেটে পড়ে না থাকলে বুঝতেই পারবে না ব্যাটসম্যানকে ঠিক কোন লাইনে বোতলবন্দি করে ফেলা যাবে। জাডেজারও একটা সময় সেটাই হচ্ছিল। কিন্তু বোলিংকে উপেক্ষা করার দোষ যদি ওকে দিতে হয়, ফিরে আসার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ ওরই। জাডেজার প্রতিভা নিয়ে কোনও দিনই আমার সন্দেহ ছিল না। নেটে প্রথম দিন দেখেই মনে হয়েছিল, অসম্ভব প্রতিভা। শুধু ঠিকঠাক ঘষামাজা দরকার। আর ওর সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, নিজের শেকড় ভোলে না। ভোলে না যে দুঃস্থ পরিবার থেকে ওকে উঠে আসতে হয়েছে। মাঠে ঢোকার প্রথম দিন থেকে দারিদ্রের সঙ্গেও যুঝতে হয়েছে। এখনকার ক্রিকেটারদের নিয়ে অনেককে বলতে শুনি যে, আইপিএল খেলে-খেলে বারোটা বাজছে। এত টাকা পাচ্ছে যে মাথা ঠিক রাখতে পারছে না। সে দিক থেকে জাডেজা এখন কোটি কোটি টাকা পায়। নিয়মিত জাতীয় দলে খেলে। কিন্তু কখনও দেখলাম না, অর্থ ওর মধ্যে কোনও পরিবর্তন এনেছে। বরং দেখি, আজও এক কথায় বুচিবাবু খেলতে রাজি হয়ে যায়। আজও নেটে সবার আগে ঢোকে, বেরোয় সবার শেষে।
ওভালে ওর দুর্ধর্ষ বোলিং (৫-৩৬) দেখে অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, বাঁ হাতি স্পিনার হিসেবে ছেলেটা কত দূর যাবে? কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছেন, ছেলেটা টিমে ঢুকল রঞ্জিতে দু’টো ট্রিপল সেঞ্চুরি করে। কিন্তু ঢুকে হয়ে গেল বোলার। কখনও এ জিনিস আন্দাজ করেছিলাম কি না? উত্তরে একটা কথা বলব। জাতীয় দলে ঢোকার পর জাডেজার ব্যাটিং খারাপ হয়েছে, বলা যাবে না। ব্যাটিংয়েও আপনি ওর থেকে দরকারে ৪০-৫০ পেয়ে যাবেন। আবার বল হাতে দু’তিনটে উইকেট দেবে। ফিল্ডিংয়ে গোটা কুড়ি রান বাঁচাবে, কঠিন ক্যাচ ধরবে অনায়াসে। আজ ওভালেই যেমন ওর খেলা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, একজন নয়। একসঙ্গে যেন তিনটে প্লেয়ার খেলছে! ও কত দূর যাবে, কী করবে, সে উত্তর আমার কাছে নেই। শুধু বলব, ও এখন কমপ্লিট প্যাকেজ।
যে প্যাকেজকে ধোনি কেন, ক্রিকেট বিশ্বের যে কোনও টিম এখন লুফে নেবে!

জাডেজা-জাদু
ইংল্যান্ডের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া ভারতীয় বোলারদের তালিকায় চার নম্বর। বাকি তিন কপিল দেব, রবিন সিংহ, বেঙ্কটেশ প্রসাদ।
ইংল্যান্ডের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া একমাত্র ভারতীয় স্পিনার।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স।
ওয়ান ডে-তে বিদেশের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া তৃতীয় বাঁ-হাতি ভারতীয় স্পিনার। রবি শাস্ত্রী (পারথ, ১৯৯১) ও সুনীল জোশীর (নাইরোবি, ১৯৯৯) পর।

ব্যাটিং ম্যাচ- ৫, ইনিংস-৬, রান-৯৭,
গড়-১৯.৪০

বোলিং ওভার-২৬৩.২, রান-৫৩৬,
উইকেট-২৭, সেরা- ৫-৫৮

ব্যাটিং ম্যাচ-১৯, রান-৩২০,
সর্বোচ্চ-৬১ নআ, গড়-৩২.০০
বোলিং ওভার-১৫১.২, রান-৬৫৯,
উইকেট-২৪, সেরা- ৫-৩৬

ব্যাটিং ম্যাচ-৫, ইনিংস-৮, রান-৭৯৪,
সর্বোচ্চ-৩৩১, গড়-১১৩.৪২, সেঞ্চুরি-২
বোলিং ওভার-২১৪.৪, রান-৫০২,
উইকেট-২৪

ব্যাটিং ম্যাচ-১৮, ইনিংস-১৪, রান-২০১,
গড়-২৫.১২, স্ট্রাইক রেট-১৪৮.৮৮
বোলিং ওভার-৪৩.১, রান-৩২৩,
উইকেট-১৩




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.