ভোটের আগেই হাজার আসন তৃণমূলের ঝুলিতে
রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। পরিবর্তনের ঝড়ে লালের জায়গায় এসেছে সবুজ! তবে বিনা যুদ্ধে লড়াইয়ের ছবিতে এতটুকুও পরিবর্তন নেই!
বরং চলে আসা ট্র্যাডিশন বজায় রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘রেকর্ড’ সংখ্যক আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে শাসক তৃণমূল। পেরোতে চলেছে এক হাজারের গণ্ডী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৮৮২টি আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তত্‌কালীন শাসক সিপিএম। আর বর্তমান শাসক তৃণমূল ১০৫০টিরও বেশি আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বক্তব্য, “নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে কি না, মানুষ দেখছেন। তাঁরা সঠিক সময়ই জবাব দেবেন। সন্ত্রাসের জন্য বহু আসনে আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি। যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদেরও নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করানো হয়েছে।” জবাবে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “মানুষ আর সিপিএমকে পছন্দ করছে না। তাই ওরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। আমরা কাউকে বাধা দিইনি। বাধা দিলে কী ওরা এতগুলো আসনে প্রার্থী দিতে পারত?”
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে ১০৭৯টি আসনে কোনও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। এই সব আসনে একজনই প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে ৯৪৬টি আসন গ্রাম পঞ্চায়েতের। বাকি ১৩৩টি আসন পঞ্চায়েত সমিতির। জানা গিয়েছে, এই ১০৭৯টি আসনের মধ্যে হাতেগোনা কিছু বাদে বাকি সব আসনেই তৃণমূলের প্রার্থী রয়েছেন। ‘রেকর্ড’ সংখ্যক আসনে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বি না- থাকায় বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েতও শাসক দলের দখলে আসতে চলেছে। যেমন, কেশপুরের কথাই ধরা যাক। কেশপুরে ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৩টিতেই চালকের আসনে তৃণমূল। অর্থাত্‌, ওই ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে যে সংখ্যক বিরোধী প্রার্থী রয়েছেন, তাঁরা যদি সকলে জেতেন, তাহলেও গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করতে অসুবিধে হবে না। কারণ, অর্ধেকেরও বেশি আসন শাসক দলের ঝুলিতে। দলীয় নেতৃত্বও তা মানছেন। তবে তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তীর দাবি, “কোথায় সন্ত্রাস হয়নি। মানুষ সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই সংখ্যার সমীকরণে ভোটের আগেই এই পরিস্থিতি।” ২০০৮ সালের থেকে এ বার পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরেই কিছু আসন বেড়েছে। পাঁচ বছর আগে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ছিল ৩ হাজার ৩০৯টি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন ছিল ৭৫০টি এবং জেলা পরিষদের আসন ছিল ৬২টি। আর এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ৩৮৪৬টি। পঞ্চায়েত সমিতির আসন ৭৯৮টি এবং জেলা পরিষদের আসন ৬৭টি। অর্থাত্‌, ৫৯০টি আসন বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে শাসকের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলা আসন সংখ্যাও।
কেমন? ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের যে ৮৮২টি আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তত্‌কালীন শাসক সিপিএম, তারমধ্যে ছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৩৬টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির ১৪১টি এবং জেলা পরিষদের ৫টি। আর এ বার যে ১ হাজার ৭৮টি আসনে কোনও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না, তারমধ্যে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯৪৫টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির ১৩৩টি। পরিবর্তন নেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের ছবিটাতেও! ২০০৮ সালে ১ হাজার ৭১৯টি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছিল। তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। এ বার ঠিক উল্টো। চাপ দেওয়ার অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
সবমিলিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাতার হয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি। গ্রাম পঞ্চায়েতে ১০ হাজার ৯০টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। প্রত্যাহার-পর্ব শেষে প্রার্থী রয়েছেন ৮ হাজার ৯০ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে যেখানে ২ হাজার ৩৭২টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, সেখানে প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯১২ জন এবং জেলা পরিষদে যেখানে ৩৯৪টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, সেখানে প্রার্থী রয়েছেন ২৬৯ জন। একদা ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত কেশপুরে সিপিএমের পরিস্থিতি শোচনীয়। কেশপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সিপিএমের ২৩ জন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ২১ জনই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। অর্থাত্‌, প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ২ জন!
শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে সিপিএমের ৫২০ জন মনোনয়ন জমা দিয়েও পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের সংখ্যাটা ৯৬। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের বক্তব্য, “বহু জায়গায় জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। তৃণমূল গণতন্ত্রে আস্থা রাখে তো! এগুলো তারই নমুনা। মানুষ তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে সব কিছু বিচার করবেন। সন্ত্রাসের জবাব ভোটেই দেবেন।” জবাবে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান বলেন, “কেশপুর-গড়বেতার কথা মানুষ এত সহজে ভুলে যাবেন? কত সন্ত্রাস-অত্যাচার হয়েছে। পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো জেলা পরিষদের মতো আসনেও সিপিএম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। ভাবা যায়! মানুষের উপর আস্থা রয়েছে। সিপিএমের সন্ত্রাসের জবাব তাঁরা ব্যালটেই দেবেন।” সব মিলিয়ে লক্ষ্য যেখানে ক্ষমতা দখল, সেখানে বদলেছে শুধু শাসকের ‘মুখ’ই। বাকি সবই যেন এক!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.