দলের প্রতীক জমা দিতে ভুলে যাওয়ায় গোঘাটে অন্তত ২০টি পঞ্চায়েত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী তৃণমূল প্রার্থীদের নির্দল বলে বিবেচিত করবে নির্বাচন কমিশন।
মগরা ১ পঞ্চায়েতের অন্তত ১০টি আসনে আবার দু’টি করে প্রতীক জমা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। প্রত্যেকটিতেই দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সই ছিল। এ ক্ষেত্রে পরে যাঁরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাঁরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তালিকায় রয়েছেন মগরা ব্লক সভাপতি বিকাশ রায় এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রানা ঘোষ।
দু’টি ক্ষেত্রেই পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমান এবং বলাগড়ের বিধায়ক অসীম মাঝিদের উপরে দলীয় প্রার্থীদের প্রতীক বণ্টনের দায়িত্বে ছিল। অসীমবাবুর বক্তব্য, “রাজ্য থেকে অতিরিক্ত কিছু প্রতীক দেওয়া হয়। সেগুলি ঠিকঠাক মেলানো হয়নি বলেই ভুল হয়ে গিয়েছে।” পারভেজ অবশ্য বলেন, “কোথাও কোনও সমস্যা নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশদে কিছু বলব না।” প্রশাসন সূত্রের খবর, চুঁচুড়া-মগরা পঞ্চায়েত সমিতি এবং মগরা ১ পঞ্চায়েত ওই প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে যাঁরা আগে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদেরই তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিকাশবাবু বলেন, “মুকুলদা (রায়), পার্থদা (চট্টোপাধ্যায়), জেলা সভাপতি সবাই বিষয়টি জানেন। নির্বাচনে দলের দেওয়া দায়িত্ব পালন করব।”
বস্তুত গণ্ডগোল এড়াতে এ বার তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ আসনের প্রতীক আলাদা রঙের করেছিল। পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে গোলাপি, পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে হলুদ এবং জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে কচি কলাপাতা। মগরা ১ পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অতিরিক্ত কিছু হলুদ রঙের কিছু প্রতীক জমা পড়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসনেও একই অবস্থা। নির্বাচন কমিশনের কাছে অবশ্য রঙের বিষয়টি বিবেচ্য নয়। জেলার এক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী যিনি মনোনয়নপত্র আগে জমা দিয়েছেন, তাঁর ক্ষেত্রেই প্রতীকটি বিবেচিত হবে। অর্থাৎ তিনি নির্দিষ্ট দলের প্রার্থী হবেন। অন্যেরা নির্দল হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিল করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।”
বিষয়টি নিয়ে দলের অন্দরে সমস্যা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য নেতৃত্ব কী ভাবে একই পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রতীক নেতাদের হাতে দিলেন। গোঘাটের ক্ষেত্র আদৌ প্রতীক জমা পড়ল না। এ ক্ষেত্রে দলের অন্দরে প্রশ্ন, যাঁরা এ বিষয়ে দলের দায়িত্বে ছিলেন নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে কতটা সম্যক ধারণা তাঁদের রয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের যখন টনক নড়েছে, তার আগেই প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের এক রাজ্য নেতা বলেন, “গোটা ঘটনায় দলের মুখ পুড়েছে। পুরো বিষয়টি যদি ভুলবশত হয়, তা হলে এক রকম। আর যদি উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে হয়ে থাকে, তা হলে দল কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।” রাজ্য নেতৃত্ব যাই বলুন, মগরায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিকাশবাবুর জায়গায় তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ানো বর্তমান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীপক মণ্ডল বলেন, “কে আমাকে প্রতীক দিয়েছেন, সেটা বলা সম্ভব নয়। তবে দলের বাইরে থেকে তো প্রতীক পাইনি!” দল অবশ্য দীপকবাবুকে প্রার্থিপদ তুলে নিতে বলেছিল বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর। |