কেঁদে ভাসাচ্ছিলেন প্রৌঢ়া। বলছিলেন, “আমার তোমাদের কথা মতো কাজ করেছি। আমার ছেলে-সহ ৫ জন কংগ্রেস প্রার্থীই মনোনয়ন পত্র তুলে নিল। এ বার আমাদের ঘরে থিতু হওয়ার ব্যবস্থা কর। স্বামী-ছেলেরা যেন ঘরে থেকে চাষাবাদ করতে পারে। সংসারগুলো ভেসে যাচ্ছে।” কথা বলছিলেন যাঁর সামনে দাঁড়িয়ে, সেই তৃণমূল নেতা প্রৌঢ়ার ছেলের বয়সীই হবেন। সোমবার ঘটনাস্থল আরামবাগ ব্লকঅফিস চত্বর।
তৃণমূল নেতা প্রৌঢ়াকে একটু তফাতে সরিয়ে তাঁর মাথা নিজের বুকে টেনে নিয়ে বললেন, “মা, আমি রাজেশ চৌধুরী আপনাকে কথা দিচ্ছি, সকলে বাড়িতে থাকতে পারবেন। স্বাধীন ভাবে কাজকর্ম করতে পারবেন।” প্রৌঢ়া বললেন, “বাড়ির আসবাবপত্র লুঠ হয়েছে। ভাঙচুরের ফলে ঘরের একটা ইটও আস্ত নেই।” নেতা প্রৌঢ়ার মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে আশ্বাস দিলেন, “সব আগের মতো হয়ে যাবে।” প্রৌঢ়ার ছেলে বললেন, “রাজেশদা, স্রেফ আপনার উপরে ভরসা রেখেই মনোনয়ন তুলে নিয়েছি আমরা। এ বার গ্রামে শান্তি ফেরাবার কথা রাখুন। একই আবেদন রাখলেন মনোনয়ন পত্র তুলে নেওয়া আরও দুই প্রার্থী। আরামবাগের যুব তৃণমূল নেতা রাজেশ চৌধুরী ওরফে আলমগীর চৌধুরী বললেন, “অশান্তির কোন অবকাশই থাকবে না আরামবাগে।” ফিরতি পথে ওই কয়েক জনের গাড়ি ভাড়াও মিটিয়ে দিতে চাইলেন রাজেশ। নিলেন না কেউ।
রাজেশ পরে বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে আমাদের তফাতটা এখানেই। ওরা বোমা-বন্দুক নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতো। আর আমরা ভালবেসে, বিনয়ী হয়ে কাজ হাসিল করছি।” হরিণখোলার কংগ্রেস নেতা জয়নাল খান অবশ্য জানালেন, তৃণমূলের মাত্রাছাড়া সন্ত্রাসের কাছে এ ছাড়া অন্য পথ ছিল না। সন্ত্রাসের অভিযোগ যথারীতি অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব।
আরামবাগের হরিণখোলা ১ পঞ্চায়েত এলাকায় কংগ্রেস প্রার্থিপদ তুলে নেওয়ায় ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতে এবং পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচনে আর কোনও কংগ্রেস প্রার্থী রইলেন না। শুধু আছেন এক জন জেলা পরিষদ প্রার্থী।
আরামবাগ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ২২১টি। পঞ্চায়েত সমিতি আসন ৪৫টি। জেলা পরিষদ আসন ৩টি। সিপিএম গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে একটি আসনে প্রার্থী দিলেও তা তুলে নিয়েছে। সিপিআই লড়ছে ৫টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম একটি আসনে লড়ছে। জেলা পরিষদের সব ক’টি আসনে অবশ্য প্রার্থী দিয়েছে বামেরা।
সিপিএমের সাংসদ শক্তিমোহন মালিক বলেন, “তৃণমূলের সন্ত্রাস এই এলাকায় নতুন নয়। প্রার্থী দিয়ে অনেকেই তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। আবার অনেকে মনোনয়ন জমাই দিতে পারেনি।” |