সম্পাদকীয় ২...
বাংলায় এম এ
হাজারিবাগের বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম এ পড়াইবার দাবি অবশেষে স্বীকৃতি পাইয়াছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সবুজ সংকেত দিয়াছে। বঙ্গভাষা ও সংস্কৃতি নাকি ইহাতে উজ্জীবিত হইবে। পশ্চিমবঙ্গের বাহিরে বিভিন্ন প্রদেশে বঙ্গভাষা ও সাহিত্য পাঠের পরিসর নানা কারণে ক্রমেই সংকুচিত হইয়া আসিতেছিল, সে দিক হইতে ইহা সত্যই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরে বঙ্গভাষা পাঠ্যবিষয়ের মর্যাদা লাভ করিল। কিন্তু গভীরতর প্রশ্ন হইল, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে কোনও ভাষা পাঠ্য হইলেই কি ভাষা-সংস্কৃতির উদ্ধার সম্ভব?
প্রশ্নটি নূতন নহে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মডার্ন ইন্ডিয়ান ভার্নাকুলারস নামক ছাতার তলায় যখন বাংলায় এম এ পড়ানো চালু হয়, তখন অনেকেই ভাবিয়াছিলেন, আহা আহা, বাংলার বুঝি প্রভূত উন্নতি হইবে। আবার অনেকের ভাবনা, ইহাতে আর যাহাই হউক বঙ্গসংস্কৃতির উদ্ধারের আশা নাই। ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাধ্য ও সামর্থ্য লইয়া নানা রচনা প্রকাশিত হইয়াছিল। বিভাগের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী যে কিছু শেখে না, তা ক্রমশই টের পাওয়া গিয়াছিল। প্রথম পর্বে পাঠ্যসূচি যাহাও বা অন্য ভাষার সহিত সম্পর্কিত ছিল, পরে ক্রমশই বাংলা বিদ্যার পাঠ্যসূচি সংকুচিত হইতে হইতে কেবল গল্প-উপন্যাস-সাহিত্যের ইতিহাস ও পুরাতন কিছু সাহিত্যতত্ত্ব কপচাইবার আধার হইয়া উঠিল। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলা বিদ্যাচর্চার পাঠ্যসূচি লইয়া স্বাধীনতার পরে যে আলোচনাসভা হইয়াছিল, তাহাতে কম-বেশি সবাই স্বীকার করিয়াছিলেন, বাংলা আসলে সহজে এম এ পাশ করাইবার বিদ্যায়তনিক আয়োজন। সেই সহজিয়া ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে। বাংলায় উচ্চশিক্ষা বলিতে আজও মোটের উপর একই প্রকার কিছু প্রশ্নোত্তর কণ্ঠস্থ করাই বোঝায়। কাজেই বিনোবা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম এ বলিতে যে সাংঘাতিক কিছু বুঝাইবে, এমন মনে করিবার কারণ নাই। দেশে এত কাল অবধি প্রত্যেক বৎসর যত জন বাংলায় এম এ পাশ করিতেন, তাহার চাহিতে কিছু বেশি জন বাংলায় এম এ পাশ করিবেন।
ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করিবার নানা উপায় রহিয়াছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হইল ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ও জনপরিসরে ভাষার প্রয়োগ যাহাতে হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। ভাষার প্রয়োগবৃদ্ধির জন্য নানা কার্যকর ‘উপকরণ’ আবশ্যক। যেমন, নানা প্রকার অভিধান, কোষগ্রন্থ, পরিভাষা কোষ ইত্যাদি। ভাষাশিক্ষার ও ভাষাপ্রয়োগের উপকরণ বাংলায় খুবই কম। বস্তুত, এক কালে এই বিষয়ে বাঙালি অনেক বড় কাজ করিয়াছিল, এখন সেই তুলনায় কিছুই হয় না। এ সবে মন দেওয়া হইলে অনেক বেশি কাজের কাজ হইবে। নিছক গতানুগতিক স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগ খুলিবার সংবাদে আনন্দের কারণ নাই। যদি সেই এ বিভাগ অন্য রকম কিছু করিবার কথা ভাবে, তাহা হইলেই মাত্র বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির উন্নতি হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.