|
|
|
|
গগৈ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ দলীয় বিধায়করা |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
রাজ্য সরকার আমলাতন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অসমে সরকারি প্রকল্পগুলির ঠিকমতো রূপায়ণ হচ্ছে না। সাংসদ পুঁজির ধন পৌঁছচ্ছে না সাধারণ মানুষের কাছে। মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বাড়ছে। মন্ত্রীদের একাংশ জনপ্রতিনিধিদের পাত্তাও দিচ্ছেন না—এ সব অভিযোগ বিরোধীদের নয়, অসমের শাসকদল কংগ্রেসের বিধায়করাই নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধে দলনেত্রী সনিয়া গাঁধী ও অসমের সাংসদ তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ক্ষোভ জানিয়ে এলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ বেশ কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিধায়কদের একাংশ বিক্ষিপ্ত বিদ্রোহে সামিল। মুখ্যমন্ত্রী বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেও বিধায়করা সনিয়া-মনমোহনকে জানিয়েছেন, তাঁরা দলের একনিষ্ঠ কর্মী।
রাজ্যসভার নির্বাচনের আগে অসমের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ ও সম্পাদক পরভেজ হাসমির সঙ্গে বিদ্রোহীরা দফায় দফায় বৈঠক করলেও এআইসিসি বিদ্রোহকে মাথাচাড়া দিতে দেয়নি। এ বার বিদ্রোহীরা একেবারে হাইকমান্ডকে নিজেদের ক্ষোভ জানাবেন বলে দিল্লিতে হাজিরহন। গত কাল ৮ বিদ্রোহী বিধায়ক সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে সব ক্ষোভ জানান।
আজ বিধায়ক গৌতম বরা, প্রদান বরুয়া, চন্দন সরকার, রাজু সাহু, বলিন চেতিয়া, রূপজ্যোতি কুর্মি, পল্লবলোচন দাস, জয়ন্তমল্ল বরুয়া, রেকিবুদ্দিন আহমেদ, বিনন্দ শইকিয়া, রাজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ, সুস্মিতা দেব, রুমি নাথ, মানসিং রংপি, পীযুষ হাজরিকা, আবু তাহের ব্যাপারিরা ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডে মনমোহন সিংহের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে তাঁরা সাংবাদিকদের জানান, সনিয়া ও মনমোহনের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা খুশি। বৈঠকে রাজ্যের অনুন্নয়ন, মাওবাদী সমস্যা, সীমানা সমস্যা, বন্যা ও ভূমিক্ষয় সমস্যা নিয়ে কথা বলে অসমের জন্য বরাদ্দ অর্থ বাড়াবার আবেদন রেখেছেন তাঁরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অভিযোগ না শোনার জন্যই তাঁদের দিল্লির দরবারে হাজির হতে হয়েছে। জয়ন্তমল্ল বরুয়া বলেন, “আমরা শক্তি প্রদর্শনে আসিনি। লোকসভা নির্বাচনের আগে শীর্ষ নেতৃত্বকে আমাদের মনের কথা জানানোর প্রয়োজন ছিল। সনিয়া ও মনমোহন সিংহের কানে ৩৫ জন বিধায়কের ক্ষোভ পৌঁছে দিতে পেরে আমরা খুশি। প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ আমাদের ‘বিদ্রোহী’ বলে চিহ্নিত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে সাফ জানিয়েছি, আমরা বিদ্রোহী নই। দলের বাধ্য সৈনিক।”
বিধায়করা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, কয়েকটি বিভাগ ছাড়া রাজ্যের বাকি দফতরগুলিতে ঠিকভাবে কাজ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ধনের ব্যবহার হচ্ছে না। বরুয়ার কথায়, “আমরা মানুষের সঙ্গে থাকি। আমলারা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে গ্রামের বাস্তব সমস্যা বুঝতে পারেন না।” রাজু সাহু বলেন, “সাংসদ পুঁজি কাকে বলে ১২ বছরে চোখে দেখিনি। চা-জনজাতির উন্নয়নে সেই পুঁজি ব্যবহৃতও হচ্ছে না।” রেকিবুদ্দিন আহমেদের কথায়, “রাজ্য কংগ্রেসের যে নেতা-মন্ত্রীরা আমাদের ক্ষোভ ও বিদ্রোহকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের নিয়ে মজা করছিলেন, তাঁর আশা করি এ বার বুঝবেন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সবার সমান দাম রয়েছে।” রূপজ্যোতি কুর্মির কথায়, “নাগাল্যান্ডের হামলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আজ অবধি আমার সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলেননি। অথচ প্রধানমন্ত্রী এতটা সময় দিলেন। অসম-নাগাল্যান্ড সীমা সমস্যা নিয়ে প্রধামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমারা প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দিয়েছি, সীমানা সমস্যা মেটাতে দুই মুখ্যমন্ত্রী শান্তি আলোচনায় বসুন। বিতর্কের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে দুই রাজ্যের মানুষের প্রবেশই নিষিদ্ধ করা হোক।” বিধায়ক মানসিং রংপির ক্ষোভ, “ভারত সরকার অসমের জন্য যথেষ্ট টাকা দেয়। তা সময়মতো খরচ না করায় টাকা ফেরত যায়। গত অর্থবর্ষে অসমের জন্য বন্টিত সাড়ে ১০ হাজার কোটির মধ্যে ২৭০০ কোটির বেশি খরচ করা যায়নি। আমলাতান্ত্রিকতার জন্যই ধুঁকছে রাজ্য। অথচ এ নিয়ে কথা বলতে গেলেই মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পার্ষদরা বিরক্ত হন। আশা করি প্রধানমন্ত্রী সমস্যা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন।”
তরুণ গগৈ অবশ্য দাবি করেছেন, বিদ্রোহী বিধায়করা কেবল তাঁর নয়, অনেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ জানিয়েছেন। ১৮ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করলে তিনিও পদত্যাগে রাজি। |
|
|
|
|
|