হাওড়া স্টেশন চত্বরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম রুখতে স্টেশনের বাইরে বসানো হচ্ছে ৮টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ক্যামেরাগুলি মূলত হাওড়া স্টেশনের বাইরে নিউ কমপ্লেক্স থেকে ওল্ড কমপ্লেক্স পর্যন্ত যে ট্যাক্সিস্ট্যান্ড আছে, সেই এলাকায় নজরদারি চালাবে। পাশাপাশি, স্টেশনে যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষও। তা অবশ্য এখন প্রকাশ করতে চাইছেন না তাঁরা। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে স্টেশনে আরও কয়েকটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি একটি বিশেষ নজরদারি বাহিনী গড়ার কথাও ভাবছে রেল।
গত সোমবার ভোরে হাওড়া স্টেশন চত্বরে এক দৃষ্টিহীন ছাত্রকে মারধর করে তাঁর মোবাইল ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুই দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, ওই ছাত্র ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। কলকাতার একটি কলেজ থেকে সদ্য স্নাতক হয়েছেন তিনি। অভিযোগ, ওই ছাত্র চিৎকার করলেও সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেননি। এমনকী, রেলপুলিশ ও রেলরক্ষী বাহিনীর কাছে গিয়েও সাহায্য পাননি তিনি।
মঙ্গলবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই হাওড়া স্টেশনের বাইরে ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট ও রেল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। এ দিন সিটি পুলিশের পদস্থ অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে। এর পরেই ক্যামেরাগুলি বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে সিটি পুলিশের কয়েক জন কর্তা পূর্ব রেলের ডিআরএম-এর সঙ্গেও বৈঠকে বসেন। সেখানে হাওড়া সিটি পুলিশের পক্ষ থেকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে স্টেশনের বাইরে আরও কয়েকটি ক্যামেরা ও যাত্রীদের জন্য ছাউনি করে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
অজেয় রানাডে বলেন, “স্টেশনের বাইরে আগে একটি ক্যামেরা ছিল। আরও ৮টি লাগানো হবে। আমরা রেলের সঙ্গে কথা বলছি। যাত্রী-নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ আরও কী ভাবে বাড়ানো যায়, দেখছি।” হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, আজ, বুধবার থেকে ক্যামেরা বসানো শুরু হবে।
হাওড়ার ডিআরএম অর্নিবাণ দত্ত বলেন, “সোমবার ওই ছাত্রের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেগুলি অবশ্য এখনই বলা যাবে না। কথায় নয়, কাজে করে দেখাতে চাই।” রেল সূত্রে খবর, স্টেশনের ভিতরে এখনও এমন কিছু জায়গা আছে, যেখানকার ছবি ক্যামেরায় আসে না। সে সব জায়গা চিহ্নত করে আরও সিসি ক্যামেরা বসানো যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, রেলরক্ষী বাহিনী থেকে নির্বাচিত করে স্টেশনে পাহারা দেওয়ার জন্য বিশেষ বাহিনী গড়ার ভাবনাও আছে।
হাওড়া স্টেশন চত্বরে দুষ্কৃতীদের দাপট নতুন নয়। বিশেষ করে ট্যাক্সি-দালাল সেজে থাকা দুষ্কৃতীরা যে ভাবে বছরের পর বছর স্টেশন চত্বর জুড়ে যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, প্রি-পেড থেকে চুরি, ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাইয়ের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল রাজ্য প্রশাসনও। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ট্যাক্সি-স্ট্যান্ডের দায়িত্ব রেলপুলিশের হাত থেকে যায় হাওড়া সিটি পুলিশের হাতে। দায়িত্ব পেয়েই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্টেশন চত্বরে হওয়া অপরাধের মূল কারণ, চোলাই মদের ব্যবসা ও ট্যাক্সি-দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয় হাওড়া সিটি পুলিশ। মাস খানেক আগে মাত্র কয়েক দিনের অভিযানে ৪৬ জন দাগী দুষ্কৃতীও ধরা পড়ে স্টেশন চত্বর থেকে।
স্টেশন থেকে উদ্ধার হয় কয়েকশো লিটার চোলাইও। |