জেলা পরিষদের দু’টি আসনে চার জন। পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনে ৫৪ জন। এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২৭টি আসনের জন্য ২০২ জন।
মুরারই ১ ব্লকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রত্যেকেই দাবি করেছেন, ওই নির্দিষ্ট আসনে তিনি-ই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী!
বস্তুত, শুধু মুরারই ১ ব্লকই নয়, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার এমন বিচিত্র ছবি ধরা পড়েছে রাজ্যের শাসকদলের। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার হিসেবেই গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২,২৪৭টি আসনে তাদের অতিরিক্ত প্রার্থী ৫০৭ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৬৮ জন। নির্দিষ্ট আসনের থেকেও ৩৩ জন বেশি প্রার্থী জেলা পরিষদে। এই পরিস্থিতিতে দল কাকে প্রতীক দেবে তা নিয়েই লড়াই শুরু হয়েছে অন্দরে।
এতগুলি আসনে অতিরিক্ত প্রার্থী নিয়ে কী ভাবছে শাসকদল?
বারবার ফোন করা হলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই ফোন ধরেননি। তবে বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, “দল যাঁকে প্রতীক দেবে, তিনিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।” অন্য দিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতার দাবি, “বেশির ভাগই ডামি প্রার্থী। ঠিক সময়েই তাঁরা নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন। বাকিদের ক্ষেত্রে নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
রাজ্যের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর বিধানসভাকেন্দ্রের আওতাধীন মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব অবশ্য দীর্ঘ দিনের। এক দিকে, মন্ত্রী-গোষ্ঠী। অন্য দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠী। অনুব্রত-অনুগামী রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আবার পৈতৃক বাড়ি মুরারইয়ের কলহপুরে। ফলে জেলা সভাপতি-গোষ্ঠী এলাকায় ভাল মতোই সক্রিয়। নুরে আলম চৌধুরী আবার সাংসদ শতাব্দী রায় গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। আর বীরভূমে অনুব্রত-গোষ্ঠী ও শতাব্দী-গোষ্ঠীর বিবাদ বহু চর্চিত একটি বিষয়। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কার্যত তারই প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে এ বারের মনোনয়নে। যেখানে দলীয় শৃঙ্খলার ধার না ধরেই মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় জেলা পরিষদ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত তিন স্তরেই তৃণমূলের বহু অতিরিক্ত প্রার্থীর নাম জমা পড়েছে।
মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পলসা, মহুরাপুর, গোঁড়শা, রাজগ্রাম এই চার পঞ্চায়েত নিয়ে একটি জেলা পরিষদের আসন। সেখানে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা করেছেন সদ্য কংগ্রেস থেকে আসা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভকত। ওই একই আসনে আবার তৃণমূলের প্রার্থী হতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূল কর্মী আসগার আলি। তাঁর কথায়, “প্রদীপবাবু আসলে আমাদের রান্না করা খাবার খেতে এসেছেন। তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে লুঠ চালিয়ে এ বার জেলা পরিষদে ডাকাতি করতে চাইছেন।” তাঁর অনুগামীরা প্রদীপবাবুকে ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মানতে নারাজ। আসগার আলির দাবি, “দল ভুল প্রার্থীকে প্রতীক দিলে আমরা তা মেনে নেব না। আমি আমার মতো করে লড়ব।” শুধু তিনি নিজেই নন, এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতেও তৃণমূলের হয়েই তিনি তাঁর বহু অনুগামীকে দাঁড় করিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ও-সব কথায় পাত্তা না দিয়ে প্রদীপবাবু অবশ্য মুচকি হেসে বলছেন, “দল যাঁকে যোগ্য মনে করবে, তাঁকেই প্রার্থী করবে।”
একই ভাবে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির চাতরা, মুরারই, ডুমুরগ্রাম এই তিনটি পঞ্চায়েত নিয়ে জেলা পরিষদের একটি আসন। মনোনয়ন জমার পরে দেখা যাচ্ছে, সেখানেও তৃণমূলের প্রার্থী দু’জন। নাসিরুদ্দিন মণ্ডল এবং আবুল কালাম। নাসিরুদ্দিনের দাবি, “আবুল কালামকে ডামি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করানো হয়েছে।” ফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল কালাম অবশ্য সে কথা মেনে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তৃণমূলের মুরারই ১ ব্লকের সভাপতি বিনয় ঘোষ। আর এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী বলেন, “আমার কোনও গোষ্ঠী নেই। আর গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব আছে কিনা, তা আমার জানা নেই।” অন্য দিকে, দলে কোনও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেছেন মুরারই ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতিও।
তার উত্তর অবশ্য বোঝা যাবে আগামী শনিবার। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরেই ধরা পড়বে প্রকৃত চিত্র। জেলায় রাজ্যের শাসকদলের ঠিক কতটা আসন, দ্বন্দ্বহীন! |