দেওয়ানদিঘিতেও অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াই সিপিএমের
নোনয়ন প্রত্যাহারের পর্বে সন্ত্রাসের অভিযোগে গলা ফাটিয়েছে সিপিএম। দিনের শেষে অনেক প্রার্থী যুদ্ধের ময়দান থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। কিছু জায়গায় আবার মাটি কামড়ে পড়েও থেকেছেন কিছু মরিয়া কর্মী।
গত বছর ২২ ফেব্রুয়ারি সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা ও বৃদ্ধ নেতা কমল গায়েনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল বর্ধমান শহরের কাছে দেওয়ানদিঘিতে। অভিযুক্তদের অর্ধেক ধরা পড়েনি। তারা নিয়ম করে খুনের প্রত্যক্ষদর্শী, প্রদীপবাবুর ভাই প্রবীর তায়ের বাড়িতে চড়াও হচ্ছে বলে অভিযোগ। সিপিএম ওই এলাকায় এতটাই কুঁকড়ে গিয়েছে যে একটাও দেওয়াল লিখতে পারেনি। যে বর্ধমান-১ ও ২ ব্লক নিয়ে গঠিত সিপিএমের সদর জোনাল কমিটি, সেখানে ২৭৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৭৬টিতে ও ৫০টি পঞ্চায়েত সমিতি আসনের মধ্যে দু’টি আসনে তারা প্রার্থীই দিতে পারেনি।
স্থানীয় বাঘাড়-১ পঞ্চায়েতের পিলখুড়ি গ্রামে এক সদ্য মা হওয়া তরুণী শিশু কোলে রাতের অন্ধকারে গ্রাম ছেড়ে গিয়ে বর্ধমান-১ ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা করেছিলেন। গ্রামে ফিরে লুকিয়েও ছিলেন। কিন্তু তাঁকে শেষমেশ মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। ক্ষেতিয়া পঞ্চায়েতের দাসপুর গ্রামে কিন্তু এক পুরুষ ও এক মহিলা প্রার্থী টিকেই রয়েছেন। আচমকা মোটরবাইক নিয়ে গ্রামে ঢুকতেই ঝাঁটা, খুন্তি, বঁটি হাতে হইহই করে তেড়ে এসেছিলেন গ্রামের মহিলারাই। পরে ভুল বুঝে বলেন, “ওহ, আমরা ভেবেছিলাম ওদের বাইক বাহিনী!” গ্রামের গোপালী দাস, বাসমতি মাঝিরা বলেন, “রোজ ওদের খুঁজতে আসত। আমরা বলেই দিয়েছিলাম, এখানে জোরজবরদস্তি চলবে না।”

সেই জোনাল অফিস। —নিজস্ব চিত্র।
রায়ান-২ পঞ্চায়েতের ভিটেডাঙার সিপিএম কর্মীদের দাবি, তাঁদের গ্রামের দুই প্রার্থীকে তুলে নিয়ে যাবার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মহিলারা বারবার বাইক বাহিনীর রাস্তা আটকে শুয়ে পড়ায় সনাতন টুডু ও গলবারি সোরেন নামে ওই দু’জনের নাগাল পায়নি বহিরাগতেরা। বদলা হিসেবে ১০০ দিনের কাজের তালিকা থেকে তাঁদের নাম কেটে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। রায়ান-১ পঞ্চায়েতের সাতগোড়িয়া গ্রামে দাঁড় করানো হয়েছে বিশিষ্ট এক সিপিএম নেতার আত্মীয়া পদ্ম মালিককে। তাঁর মা অর্চনাদেবীর কথায়, “রোজ বাঁদরগুলো এসে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করছিল। শেষে বিরক্ত হয়ে এক দিন বেরোলাম ঝাঁটা হাতে। ওরা পালাল।” গ্রামের বৃদ্ধ শিশির যশ বলেন, “এত দিন এই গ্রামে আমরা অশান্তি সহ্য করিনি। করবও না।”
বর্ধমান জেলা পরিষদের সিপিএম সদস্য সামসুর আলি শেখ এ বারও ২৭ নম্বর আসনে দলের প্রার্থী। ২০১১ সালের ১৩ মে বিধানসভা নির্বাচনের গণনা কেন্দ্র থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। ইউসুফাবাদ গ্রামের বাড়িতে পড়ে রয়েছে তিনটি গোলা ভরা ধান। তাঁর ভাইপো সেলিম শেখ বলেন, “গত দু’বছর ধরে যা চলছে তাতে এ বার আমরা কাকাকে আর প্রার্থী না হতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি শুনলেন না। বললেন, দলের দুঃসময়ে সরে দাঁড়াব কী করে!” দেওয়ানদিঘিতে সিপিএমের বর্ধমান সদর জোনাল অফিসে বসে জোনাল সম্পাদক মহবুব আলম বলেন, “এ বার আমরা একটাও দেওয়াল লিখন করতে পারব না। প্রচারসভা করতে পারব না। তবু যাঁরা শত চাপেও মনোনয়ন তোলেননি, তাঁদের জন্য আমরা গর্বিত।”
ওই এলাকায় তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী নরুন হাসান অবশ্য বলেন, “আমরা সিপিএমের লোকেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে যাব কেন! যা করার, গ্রামের মানুষই করছেন। তাঁদের সমর্থন রয়েছে বলেই তো আমরা ইতিমধ্যে সরাইটিকর, বাঘাড়-১ ও ২ পঞ্চায়েত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছি। বাকি সবও জিতব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.