সমর্থক খুন, কোর্টে বিপক্ষে সওয়াল নেতার
লের সমর্থককে সিপিএম ও কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা খুন করেছে, এই অভিযোগে কাটোয়া শহরের গোয়েন্কা মোড়ে পথসভা করেছিল তৃণমূল। মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে কাটোয়া আদালতের এসিজেএম এজলাসে অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল করলেন ওই পথসভার অন্যতম বক্তা, বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী মণ্ডল আজিজুল।
গত ১ জুন বিকেলে কাটোয়া স্টেশন বাজারে দোকানের ভিতর ঢুকে আলু ব্যবসায়ী রাজকুমার মণ্ডল দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই দোকানের কর্মী সুভাষ ঘোষ কাটোয়া থানায় সফিক শেখ-সহ আরও কয়েক জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। খুনের কিনারা করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়ার হেরোইন ব্যবসায়ী কুমার শেখ ওরফে শাহিদুল এর পিছনে রয়েছে।
সোমবার রাতে কাটোয়ার হরিপুর থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র-সহ কুমারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাকে আদালতে তোলা হলে মণ্ডল আজিজুল তাঁর হয়ে সওয়াল করেন। রাজকুমার মণ্ডল খুনের এফআইআর-এ কুমারের নাম নেই, দাবি করেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, এফআইআর-এ নাম থাকা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই নিজেদের ‘অপদার্থতা’ ঢাকতে কুমারকে গ্রেফতার করেছে তারা। কাটোয়া থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, কুমারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও গোলমাল পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল আদালত। কাটোয়া আদালতের সরকারি আইনজীবী (এপিপি) প্রবীর রায় বলেন, “পুলিশের তদন্তকারী অফিসার ১০ দিন পুলিশ হেফাজত চেয়ে আবেদন করেছিল। বিচারক আট দিন মঞ্জুর করেছে।”
আদালতে তৃণমূল সমর্থক খুনে মূল অভিযুক্ত কুমার শেখ। —নিজস্ব চিত্র।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরনো শত্রুতার জেরে কুমারের নির্দেশে রাজকুমারবাবুকে খুন করা হয়েছে। এফআইআর-এ নাম থাকা সফিক শেখের বাড়ি কাটোয়ার মাঠপাড়ায়। সে এক সময় রাজকুমারবাবুর গুদামে আলু তোলা এবং নামানোর কাজ করতেন। কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরও রাজকুমারবাবুর সঙ্গে দেখা করতেন। সফিককে ‘শিখণ্ডী’ করে রাজকুমারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে পাঠানো হয়েছিল। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যান তিনি। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “রাজকুমার সিসিটিভি দেখে পরিচিত জনদের সঙ্গে তাঁর নিজস্ব ঘরে দেখা করতেন। সফিককে দুষ্কৃতীরা কাজে লাগিয়েছে। যে গুলি চালিয়েছে তার বাড়ি বিহার বা ঝাড়খন্ড এলাকায় বলে জানা যাচ্ছে।”
কুমারের সঙ্গে রাজকুমারবাবুর ব্যাপারে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছর কালিপুজোর বিসর্জনের রাতে কুমারের দাদা রহিম খুন হয়। তার দাদাকে খুনের পিছনে রাজকুমার মণ্ডল ও আরও এক ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে বলে ধারণা হয় কুমারের। তারাই প্রায় লক্ষ টাকা ‘সুপারি’ দেয় জঙ্গল শেখকে। ওই টাকা দিয়ে জঙ্গল শেখ বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে দুষ্কৃতী নিয়ে এসে খুন করে, দাবি কুমারের। সম্প্রতি তার ‘শোধ নিতে’ জঙ্গল শেখের ছেলে সাগর শেখকে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। তারপর নিহত হলেন রাজকুমারবাবু। বর্ধমান জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, “বর্ধমান-কাটোয়া রোডে কাটোয়া শহরের মাঠপাড়ার কাছে মদের অনশপ রয়েছে। রহিম-কুমারদের তোলাবাজিতে সেই দোকান বন্ধ। তোলা চেয়ে মদের দোকানের মালিকের গয়নার দোকানেও হামলা করেছিল রহিম। তারপরই খুন হয় রহিম।” পুলিশের দাবি, জেরার মুখে কুমার জানায়, তার দাদাকে খুন করার জন্যই সে ‘বদলা’ নিয়েছে। রাজকুমারবাবুর খুনের পিছনে আরও কয়েক জন জড়িত আছে, এমন দাবি করেছে পুলিশ।
রাজকুমারবাবুর খুনের পর তৃণমূল গোয়েন্কা মোড়ে একটি পথসভা করেছিল। সেখানে মণ্ডল আজিজুল অভিযোগ করেন, সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথ ভাবে তাঁদের সমর্থককে খুন করেছে। কুমারের গ্রেফাতার করার পর তার হয়ে জামিনের সওয়াল করে মণ্ডল আজিজুল বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে আইনজীবী হিসাবে তো সওয়াল করতেই হবে। তা ছাড়া ওকালতনামাতে আমার নাম নেই।”
বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রক্ষকই ভক্ষক হয়ে অভিযুক্তকে আড়াল করতে চাইছে।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাস্তায় শাস্তি চাই বলে চিৎকার করছে তৃণমূল। বাস্তবে ওরাই অভিযুক্তকে বাঁচাতে চাইছে, সেটাই বোঝা যাচ্ছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.