কাটোয়ার আলু ব্যবসায়ী রাজকুমার মণ্ডলের (৪৫) খুনের পর এক দিন কেটে গেলেও ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারল না কাটোয়া পুলিশ। এর আগেও বেশ কয়েকটি খুন হয়েছে কাটোয়া মহকুমায়। কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা গেলেও অপরাধ কমছে না কাটোয়া মহকুমায়। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মহকুমার ব্যবসায়ীরাও। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। আজ, সোমবার শহরে ১২ ঘণ্টার ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছে কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতি। স্টেশনবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পেরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলিও।
শনিবার বিকেলে কাটোয়া শহরে স্টেশন বাজারে দোকানের ভিতর ঢুকে প্রকাশ্যে রাজকুমারবাবুকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান তিনি। রবিবার সেখানেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কাটোয়া শহরের কাছেই পাঁচঘড়া গ্রামে বাড়ি রাজকুমারবাবুর। তবে বর্তমানে তিনি বর্ধমান ও কাটোয়া শহরে থাকতেন। তাঁর পরিজনেরা কাটোয়া থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করার পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পুলিশ কোনও দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
কাটোয়া মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, কাটোয়া স্টেশনবাজার এলাকায় একের পর এক এমন ঘটনা হচ্ছে। অথচ পুলিশ সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না। গত বছর কালী পুজো ও কার্তিক লড়াইয়ের সময়েও স্টেশনবাজার চৌরাস্তায় দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায়। তার কয়েক দিন পরে দু’টি দোকানে ঢুকে হুমকিও দেয় তারা। সমিতির দাবি, এলাকায় ‘দুষ্কৃতীরাজ’ চলছে। ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ওই ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র বিদ্যুৎ নন্দী বলেন, “পুলিশের ভূমিকায় আমরা খুশি নই। প্রকাশ্যে যে ভাবে দোকানে ঢুকে আমাদের এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হল, তাতে আমরা আতঙ্কিত। এর প্রতিবাদেই সোমবার ব্যবসা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান-সহ চারটে জেলার ব্যবসাকেন্দ্র কাটোয়া। প্রতিদিন বাইরে থেকে প্রচুর লোক আসেন। এমন ঘটনায় ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেই কারণে আমরা স্টেশন বাজার চৌরাস্তা এলাকায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবি জানাচ্ছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরই কাটোয়া শহরের কাছারি পাড়ায় এক সন্ধ্যায় খুন হন বিজলি দাস নামে এর বৃদ্ধা। এই এই ঘটনার কিনারা করেছে পুলিশ। ওই বছরই কালীপুজোর বিসর্জনের রাতে শহরের কেশিয়াতে খুন হন রহিম শেখ নামে এক মাদক ব্যবসায়ী। তার ‘শোধ নিতে’ সম্প্রতি হরিসভাপাড়ার সিআই দফতরের কাছ থেকে সাগর শেখকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এমনকি, খুনের পরে তার দেহ লোপাটেরও চেষ্টা করে তারা। পুলিশ তাড়া করে বর্ধমান-কাটোয়া রোড থেকে দেহটি উদ্ধার করে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আলু ব্যবসায়ীকে রবিবার খুন করা হল।
ব্যবসায়ী মহল ও রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, কাটোয়া শহর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গত দেড় বছরে অসামাজিক কাজকর্ম অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুধু কাটোয়া শহরেই চারটে খুন হয়েছে। সিপিএমের দাবি, দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে। তাই শহরের ভিতর পর পর অসামাজিক কাজকর্ম বেড়ে চললেও পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের এতটাই যোগসাজশ যে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালেও কাটোয়া থানা তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “শহরের ভিতর একের পর এক ঘটনা ঘটছে। আগামী দিনে যাতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে, তা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে শাসক দল তৃণমূলও। রবিবার শহরের গোয়েনকা মোড়ে তৃণমূলের প্রতিবাদ সভায় দলের জেলা কমিটির অন্যতম সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “বাম জমানার পুলিশের অপদার্থতা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এ জিনিস চলতে পারে না।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান গ্রামীণ) তরুণ হালদার বলেন, “আমরা প্রতিটি ঘটনারই কিনারা করে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করেছি। এ ঘটনাতেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।” প্রতিটি ঘটনায় দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হলেও ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলছে বলে দাবি ব্যবসায়ী থেকে রাজনৈতিক মহলের। |