দাবি উঠেছে বারবার। অবরোধ-বিক্ষোভও কম হয়নি। কিন্তু রাস্তা সারানোর নাম নেয়নি প্রশাসন। কুলটির নিয়ামতপুর থেকে সালানপুরের ডাবোর মোড় পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার বেহাল রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ তাই ছিলই। সালানপুরের দেন্দুয়া মোড়ে মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যুর পরে বহিঃপ্রকাশ হল সেই ক্ষোভেরই।
বেশ কয়েক বছর ধরেই খানাখন্দে ভরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই রাস্তা। প্রায়শয়ই দুর্ঘটনা ঘটায় মেরামতির দাবি তুলেছে আসানসোলের বাস ও মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন। মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তায় আমরা বাস চালাই। কিন্তু এ বার মনে হচ্ছে প্রাণ বাঁচাতেই এই রুটে বাস চালানো বন্ধ করতে হবে।” রাস্তা সারানোর দাবিতে ওই অ্যাসোসিয়েশন এর আগে কয়েক বার এই রুটে মিনিবাস চালানো বন্ধ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও বহু বার আন্দোলনে নেমেছেন। অবরোধ, বিডিও বা মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। চাপে পড়ে মাঝে-মধ্যে সংস্কারের কাজে হাতও দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তা নামেই সংস্কার। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের পূর্বাবস্থায় ফিরে গিয়েছে রাস্তা। |
বেশ কয়েক বছর এই অবস্থায় পড়ে ১৪ কিলোমিটার রাস্তা। দেন্দুয়া মোড়ে মঙ্গলবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি। |
মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপবাবু অভিযোগ করেন, বেহাল রাস্তায় যন্ত্রাংশ ভেঙে যাওয়ায় এই রুটের প্রায় ২০ মিনিবাস বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে, সাধারণ যাত্রীরাও বিপাকে পড়ছেন। প্রশাসনের কাছে বহু চিঠি পাঠিয়েও ফল হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু কোলে জানান, অন্ধকার নামার পরে এই রাস্তায় চলাফেরা করা দুঃসাধ্য। বর্ষায় রাস্তার বড় বড় গর্ত পুকুরের আকার নেয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রাস্তাটি পূর্ত দফতরের ২ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে। বছরখানেকেরও বেশি আগে পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছিলেন, প্রায় ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই রাস্তা সংস্কারের জন্য। কিন্তু এখনও সেই কাজে হাত পড়েনি। দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাস্তাটি শুধু সংস্কার নয়, চওড়াও করা হবে। সে জন্য রাস্তার দু’পাশে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু দখল উচ্ছেদে অভিযান শুরু হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের প্রতিক্রিয়া অন্য রকম হতে পারে, এই আশঙ্কায় কাজে হাত দিতে পারেনি প্রশাসন, দাবি ওই আধিকারিকের। তবে মঙ্গলবারের দুর্ঘটনার পরে যোগাযোগ করা হলে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক অন্তরা আচার্য লেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি, রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন। পূর্ত দফতরকেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। শীঘ্রই কাজে হাত পড়বে।”
আরও এক বার মিলেছে আশ্বাসের বাণী। কাজ আদৌ হবে, না আঁচানো পর্যন্ত তা অবশ্য বিশ্বাস করতে নারাজ বাসিন্দারা। |