পেট্রোল ট্যাঙ্কারে ঝালাইয়ের কাজ করতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায় আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ ইউসুফ (২৭)। বাড়ি পানাগড়ের দার্জিলিং মোড়ে। জখম হয়েছেন আরও দু’জন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কাঁকসার রাজবাঁধে পাশাপাশি দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার ডিপো রয়েছে। সেখানে ঢোকার আগে ট্যাঙ্কারগুলি দাঁড়িয়ে থাকে জাতীয় সড়কের ধারে। বিরুডিহায় একটি ফাঁকা জায়গায় বেশ কিছু ট্যাঙ্কার দাঁড়িয়ে থাকে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ সেখানেই একটি ট্যাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটে। শেখ ইউসুফ ট্যাঙ্কারের পিছন দিকে ঝালাইয়ের কাজ করছিলেন। জখম হন ট্যাঙ্কারের খালাসি সুকান্ত গড়াই এবং বিরুডিহার বাসিন্দা উপেন্দ্র যাদব। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে যান। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলকে। পুলিশ জখম দু’জনকে প্রথমে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সুকান্তকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। উপেন্দ্রকে অবশ্য এ দিনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কাঁকসা থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে প্রথমে ফোম ও পরে জল দিয়ে ঘণ্টা দু’য়েকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। |
আগুন নেভাচ্ছে দমকল। —নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ জানিয়েছে, শেখ ইউসুফ গ্যারাজ মিস্ত্রি। তেলভর্তি ট্যাঙ্কারটি ডিপোয় ঢোকার আগে বিরুডিহার ওই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিল। ইউসুফ তখনই ট্যাঙ্কারটি ঝালাইয়ের কাজ করছিলেন। কিন্তু ডিপোয় ঢোকার মুখে ট্যাঙ্কারটিতে হঠাৎ ঝালাইয়ের প্রয়োজন পড়ল কেন, এই প্রশ্ন তুলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা অবৈধ তেলের কারবারিদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ট্যাঙ্কারের চালক-খালাসিদের সঙ্গে যোগসাজস করে ট্যাঙ্কার থেকে নানা কায়দায় তেল বের করে নেয় মাফিয়ারা। ট্যাঙ্কারের পিছনের দিকে থাকা মুখের ধাতব ‘সিল’ খুলে তেল বের করে ঝালাই করে মুখটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিনও সেই কাজই চলছিল বিরুডিহায়, অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বাসিন্দা।
পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরের পর বছর ধরে তেলের অবৈধ কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে বাবলু নন্দী, শিবশঙ্কর রায়, বিধান মজুমদার নামে কয়েক জন ব্যক্তি। কিন্তু ভয়ে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেন না। দিনে ২০-২৫টি ট্যাঙ্কারের প্রতিটি থেকে একশো থেকে দেড়শো লিটার তেল বের করে নেওয়া হয় বলে খবর রয়েছে। ‘সিল’ কেটে তেল বের করার পরে ফের তা ঝালাই দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য মিস্ত্রিকে দেওয়া হয় চারশো টাকা। তেল সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “ডিপোর বাইরে এই ধরনের কারবার দীর্ঘদিন ধরে চলছে বলে আমাদের কাছেও খবর আছে। এ নিয়ে আমরাও নাজেহাল।” এ দিন সম্ভবত সেই কাজ চলার সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে যায় বলে পুলিশের একাংশেরও অনুমান। যদিও বেআইনি তেলের কারবারের কারণেই এই দুর্ঘটনা, প্রাথমিক ভাবে তেমন প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ঝালাইয়ের কাজ চলাকালীন দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলছে।” |