আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে বিল পাশ করে প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো দ্রুত রাজ্যপালের সই নিতে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে দিল্লিতেও পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আগামী বেশ কিছু দিনের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রীর সেই আশা পূরণ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রাজ্যের পাঠানো বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন আর্থিক পরিষেবা বিভাগ এর আগে তিনটি প্রশ্ন তুলে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল ও ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। এ বার রাজস্ব এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগও আলাদা আলাদা ভাবে চিঠি পাঠাল রাজ্য সরকারের কাছে। সরকারি সূত্রের খবর, দু’টি চিঠিতে মোট ছ’টি প্রশ্ন তুলে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে নর্থ ব্লক থেকে আসা চিঠি রাজভবন ঘুরে সোমবার রাজ্যের অর্থ দফতরে পৌঁছেছে। অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণে এবং লাগামছাড়া টাকা তোলা ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিলে তার ব্যাখ্যা নেই বলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে নতুন চিঠিতে।
আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিভাগ এর আগে বিলে তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন চেয়েছিল। সেই দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানান মুখ্যমন্ত্রী। নতুন চিঠি দু’টিতে যে সব প্রশ্ন রয়েছে, রাজ্য এখনই সেগুলির জবাব দেবে বা ব্যবস্থা নেবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন নতুন চিঠি দু’টি নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানাতে রাজি হননি।
বিলটি নিয়ে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এখনও তাদের মতামত জানায়নি। কিছু দিনের মধ্যে সেই মতামতও আসবে মহাকরণে। এই ভাবে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগের মতামত বিলে অন্তর্ভুক্ত করার পরেই তা রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এর অর্থ, রাজ্য তাড়াহুড়ো করলেও বিলটি আইন হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
কী রয়েছে অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক বিভাগের পাঠানো চিঠি দু’টিতে? বলা হয়েছে, রাজ্যের তৈরি বিলে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি প্রতারণা করলে বা আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কোনও সংস্থা বাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে চাইলে শুরুতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রতিরোধের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বিলে তা বলা নেই। কেন্দ্রের মতে, এই ধরনের লগ্নি সংস্থার টাকা তোলার কারবারে রাজ্যের আইনে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকাও জরুরি। উদাহরণ হিসেবে তারা সেবির ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে। বলা হয়েছে, আর্থিক সংস্থাকে যেমন সেবির কাছে নিয়মিত আমানত সংক্রান্ত হিসেব-নিকেশ পেশ করতে হয়, রাজ্যের আইনেও তেমন সংস্থান রাখা হোক।
কেন্দ্রের আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত বিভাগ এর আগে বিলটিতে তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে বললে রাজ্যের তরফে তিনটি বিষয়ই মেনে নেওয়া হয়। তবে কেন্দ্রকে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়া গেলে তখন বিধানসভায় সংশোধনী এনে ওই তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নেবে সরকার। কিন্তু দিল্লি মহাকরণকে সাফ জানিয়ে দেয়, কেন্দ্র যে তিনটি বিষয় বিলে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে, তা না করা পর্যন্ত বিলটি সম্পূর্ণ হয় না। এবং রাষ্ট্রপতি কোনও অসম্পূর্ণ বিলে সই করতে পারেন না।
প্রথম চিঠিতে আর্থিক পরিষেবা বিভাগ যে তিনটি বিষয় বিলে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে, সেগুলি হল, অপরাধীর আগাম জামিনের ব্যবস্থা না রাখা, বিশেষ আদালতের বিচারপতির ক্ষমতা বাড়ানো ও ভিন্ রাজ্যের লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও বিশেষ আদালতে বিচারের ব্যবস্থা সুযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি জেল এড়িয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে চাইলে তার ব্যবস্থা রাখা। রাজ্য তিনটি প্রস্তাব মেনে নিলেও এ বার এল আরও ছয় সওয়াল।
রাজ্যের বিল নিয়ে জটিলতা চলছে ২০০৩ থেকেই। আগে রাজ্যের বিল নিয়ে সেবির মতামত, রাজ্যের এবং সেবির অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে অর্থ মন্ত্রক নানা ব্যাখ্যা চেয়েছিল বাম সরকারের কাছে। বর্তমান সরকারের আমলে যে বিল পাশ হয়েছে, তাতে আগের বার সেবির তোলা প্রশ্নের ব্যাখ্যা রয়েছে। এ বারেও সেবি পদ্ধতিগত দিক নিয়ে কয়েকটি ব্যাখ্যা চেয়েছে।
|