সারদা গোষ্ঠীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ কত, তা এখনও অজানা। তবে ইতিমধ্যে তাদের যত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তার মূল্য নির্ধারণের জন্য গ্লোবাল টেন্ডার বা বিশ্ব-দরপত্র ডেকেছে রাজ্য সরকার। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এ কথা জানান জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সারদার ৩৮৮টি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এখন তার মূল্যায়ন করা জরুরি। সেই কাজের জন্যই গ্লোবাল টেন্ডার ডাকা হয়েছে।
আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর দায়ের করা জনস্বার্থের মামলায় সারদা কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই-কে ডাকার আর্জি জানানো হয়েছিল। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানিতে অশোকবাবু বলেন, সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে যে-মামলা করা হয়েছে, তা বিচারের জন্য গ্রহণই করা যায় না। কারণ, কোনও আইনজীবী জনস্বার্থের মামলা করলে তাঁকে অনেক বেশি তথ্য দিতে হয়। জিপি-র বক্তব্য, সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে-অপরাধের অভিযোগ উঠেছে, সেটা সেবি-র এক্তিয়ারভুক্ত। সেবি এই ব্যাপারে সারদাকে নোটিস দিয়েছে। টাকা ফেরত দিতে বলেছে আমানতকারীদের। তার জন্য সময় দিয়েছে। ওই সময়সীমা পার হওয়ার পরে সারদা গোষ্ঠী তাদের নির্দেশ না-মানলে সেবি রাজ্যের কাছে এফআইআর করবে বলে জিপি আদালতকে জানান। তাঁর মন্তব্য, রাজ্য সরকার তখন সেবি-র এফআইআরের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেবে।
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে। এই অবস্থায় অন্য কোনও সংস্থা কেন তদন্ত করবে, সেই প্রশ্ন তোলেন জিপি। তাঁর দাবি, সারদা কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য সরকার যে-বিশেষ তদন্ত দল (সিট) তৈরি করেছে, তারা ভাল ভাবেই কাজ করছে। বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর নথিপত্র। বেশ কিছু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও অন্য কোনও সংস্থা তদন্ত করবে কেন? রাজ্য সরকার সারদা নিয়ে কেন কমিশন গঠন করেছে, তারও ব্যাখ্যা দেন অশোকবাবু। তিনি বলেন, ওই কমিশন যে এখনই সারদা কাণ্ডের সুরাহা করে দিতে পারবে, তা নয়। তবে পরবর্তী কালে সরকার এবং রাজ্যের মানুষকে যাতে এমন বিপদের মুখে পড়তে না-হয়, কমিশন তার পথ বাতলে দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমানতকারীদের দাবি খতিয়ে দেখে সরকারের কাছে তাঁদের নাম-ঠিকানা, জমা অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট চিত্রও তুলে ধরতে পারবে কমিশন।
আদালত-বান্ধব লক্ষ্মীচন্দ্র গুপ্ত আজ, মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চে তাঁর পরামর্শ জানাবেন। তিনি মতামত দেবেন মূলত তিনটি বিষয়ে।
১) সঞ্চয়িতা কাণ্ডের সময় কী ভাবে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।
২) বর্তমান অবস্থায় সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন আছে কি না।
৩) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি তৈরি করে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত।
আদালত-বান্ধবের সুপারিশের ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ চলতি সপ্তাহেই রায় দিতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
|