মনোনয়নপত্র পেশ নিয়ে বিরোধী দলগুলি সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব। কিন্তু পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় পর্বের ভোটের জন্য মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার কাজ শেষ হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের প্রার্থীরাই এগিয়ে রয়েছেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হতে হাতে রয়েছে মাত্র দু’টি দিন। কিন্তু এর মধ্যেই যে-চিত্রটা ধরা পড়েছে, তা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে চিন্তায় ফেলতে বাধ্য।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যের সব জেলায় মনোনয়নের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দু’দফায় যে ১৩টি জেলায় ভোট হওয়ার কথা, সেখানে ৫৩৩৯টি আসনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন। তার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন আছে ৪৪৮০টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৮৪৫টি এবং জেলা পরিষদের আসন ১৪টি।
প্রথম পর্বে ন’টি জেলার ভোটে ৪২৬২টি আসনে কোনও প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাই হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৬৬৪টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৮৮টি এবং জেলা পরিষদে ১০টি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। দ্বিতীয় পর্বে ভোট হবে বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহে। ওই চার জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের হার প্রথম পর্বে ভোটের জন্য চিহ্নিত জেলাগুলির তুলনায় অনেক কম। কমিশন সূত্রের খবর, যেখানে যে-দলের ক্ষমতা বেশি, সেখানে তারা অন্য দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রই পেশ করতে দেয়নি। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন সাত হাজার প্রার্থী। এবং তাঁদের ৯০ শতাংশই বামফ্রন্টের।
এ বারেও অন্তত দু’টি জেলায় ভোটের আগেই বাম শিবিরের দাপট চোখে পড়ার মতো। কমিশনের প্রাথমিক তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মুর্শিদাবাদে বামফ্রন্টের প্রার্থীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তত ৭২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। কংগ্রেস প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন ৫৮টি আসনে। তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩১টি আসন দখল করেছেন। নদিয়ায় বামফ্রন্টের প্রার্থীরা ১১৬টি আসনে এবং তৃণমূল ২৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মালদহেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন বাম প্রার্থীরা। কমিশনের তালিকা অনুযায়ী তৃণমূল ওই জেলায় ৯৮টি আসনে, বামফ্রন্ট ৭২টি এবং কংগ্রেস ৪১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন।
মুর্শিদাবাদ, নদিয়া ও মালদহে বামফ্রন্টের প্রার্থীরা যে এই হারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসন জিতেছেন, তা ওই তিন জেলার সিপিএম নেতৃত্বের বিশ্বাসই হচ্ছে না। তাঁরা বলেছেন, “আমাদের কাছে এখনও পুরো চিত্রটা পরিষ্কার নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তালিকার তথ্য এখনও আমাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না।” জেলাগুলির তৃণমূল নেত্বত্বও কমিশনের এই পরিসংখ্যানে বিশ্বাস রাখতে পারছেন না।
সোমবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের চার জেলা দুই দিনাজপুর, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি থেকে যে-রিপোর্ট কমিশনের সদর দফতরে পৌঁছেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে এখনও পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ক্ষেত্রে বামফ্রন্ট পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূলকে। তবে ওই জেলাগুলিতে মনোনয়নপত্র পেশের কাজ চলবে বুধবার পর্যন্ত। আগামী দু’দিনে চিত্রটা কতটা বদল হয়, কমিশন সে-দিকে নজর রাখছে।
কমিশন জানাচ্ছে, হুগলি জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৪৩টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। একটি আসনে নির্দল প্রার্থী জিতেছেন বিনা লড়াইয়ে। ওই জেলায় বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের কেউই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারেননি। পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৯৫টি আসনে। পাঁচটি আসনে জিতেছে কংগ্রেস। হাওড়ায় তৃণমূল ৩২২টি, বামফ্রন্ট ১৩৯টি এবং কংগ্রেস ৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসন পেয়েছে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূল ২১৮টি, ফ্রন্ট পাঁচটি আসনে জিতেছে বিনাযুদ্ধে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসন সব থেকে কম পুরুলিয়া জেলায়। সেখানে তিনটি স্তর মিলিয়ে মাত্র এক জন প্রার্থী বিনা লড়াইয়ে জিতেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই আসনটি গিয়েছে বামফ্রন্ট প্রার্থীর দখলে।
|