পঞ্চায়েত প্রথম পর্ব
না লড়েই জয়ী ৩৬০৭, বেনজির বলল কমিশন
ঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রথম পর্বে ৯টি জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছেন ৩৬০৭ জন। সোমবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। তার পরেই ছবিটা স্পষ্ট হবে। অবশ্য তার আগেই এই ঘটনাকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই সহমত বিরোধীরা। আর শাসক দলের মতে, এমন মন্তব্যের কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই।
প্রথম দফায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে মোট আসনের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৬২৫। এই আসনগুলির জন্য জমা পড়া মনোনয়নপত্র পরীক্ষার কাজ শনিবার শেষ হয়েছে। তার পরেই জানা গিয়েছে মোট ৩৬০৭টি আসনে এক জন প্রার্থীই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে তৃণমূলের ৩৩১২ জন, বামফ্রন্টের ১৭৮ জন, কংগ্রেসের ৮৭ জন। কমিশনের সচিব তাপস রায় এ দিন বলেন, “এত বেশি সংখ্যায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের ঘটনা এ রাজ্যে নজিরবিহীন।”
মনোনয়ন জমা দিতে না-পারার জন্য গোড়া থেকেই শাসক তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে বিরোধীরা। বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, শাসক দলের সন্ত্রাসের কারণেই তারা বহু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারছে না। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেন, “ন’টি জেলায় সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি আসনে বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই হামলা বাড়ছে। এখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।” একই অভিযোগ করেছে কংগ্রেস।
এই সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছে তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ঠিক নয়। অতীতে, বাম আমলে এর চেয়ে অনেক বেশি আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি।” কিন্তু বাম আমলে তৃণমূল যে সন্ত্রাসের অভিযোগ করত, সেটাই তো এখন তাদের দিকে ফিরে আসছে? মুকুলবাবুর জবাব, “সিপিএম নাটক করছে। ওদের সময় আকাশ ছোঁয়া সন্ত্রাস হতো। এখন মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সাংগঠনিক শক্তি হারিয়েই ওরা বহু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারছে না।” (কিছু আসনে তৃণমূলের প্রার্থী দিতে না-পারা প্রসঙ্গে মুকুলবাবুর ব্যাখ্যা, স্থানীয় ভাবে বোঝাপড়ার কারণেই ওই সব আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি।)
বিমানবাবু অবশ্য দাবি করেন, বাম আমলে অল্প কিছু ক্ষেত্রে মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বিরোধীরা। কিন্তু এখন হাজার হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না। তাঁর কথায়, “আমাদের সময় এমন ঘটনা ঘটেনি। আর অতীতে অন্যায় কাজ হয়েছে বলে এখনও করতে হবে, এর কোনও মানে হয় না।”
তৃণমূল তাদের প্রার্থীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে অভিযোগ তুলে শনিবার রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। প্রতিবাদে কাল, সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে গণ অবস্থান করবে তারা। মুকুলবাবু অবশ্য বলেন, “এ রাজ্যে কংগ্রেস সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল। হাওড়া উপনির্বাচনে অল্পের জন্য ওদের জামানত জব্দ হয়নি। ফলে সন্ত্রাসের কারণে প্রার্থী দিতে পারছে না বলে কংগ্রেস যা বলছে, তা একেবারেই ভিত্তিহীন।” বিরোধীদের দিকে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “মনোনয়ন দিতে না-পারলে এফআইআর করা উচিত। এ পর্যন্ত ক’টা এফআইআর করা হয়েছে?”
রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবশ্য সন্ত্রাসের আবহের কথাই বলছে। তাপস রায় বলেন, “মনোনয়ন দাখিল পর্বে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চারশোরও বেশি হিংসার ঘটনার অভিযোগ এসেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তবে তৃণমূলের তরফেও কিছু অভিযোগ মিলেছে।” পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান ও বীরভূম থেকেই বেশি অভিযোগ এসেছে বলে তাপসবাবু জানান।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে ভোট প্রক্রিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে আসেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে।
কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, নির্বাচন পর্ব অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাহিনীর কী ব্যবস্থা হল, সে ব্যাপারে কোনও তথ্যই জানায়নি রাজ্য সরকার। রাজ্যপালকে সে কথাই জানিয়েছেন মীরা পাণ্ডে।
একই সঙ্গে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, মীরা সে কথাও রাজ্যপালকে বিশদে জানিয়েছেন বলে কমিশন সূত্রের খবর। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিরোধী প্রার্থীরা কী ভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন, অথবা মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য কেমন ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা-ও রাজ্যপালকে জানিয়েছেন তিনি। পরে মীরা বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে রাজ্যের অবস্থান ও নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সে সবই রাজ্যপালকে জানাতে গিয়েছিলাম।”
কমিশনের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ মতো মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় ৩০০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী দেওয়ার কথা ছিল রাজ্য সরকারের। মিলেছে মাত্র ৩৫ কোম্পানি। এই পরিস্থিতিতে তাদের কী করণীয়, তা জানতে সোমবার ফের হাইকোর্টে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও কমিশন সূত্রে খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.