ঘটনার পরে প্রায় দু’দিন পেরিয়ে গেলেও বারাবনির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দিলীপ সরকার খুনের কোনও কিনারা হল না। উল্টে, পুলিশকর্তাদের নানা রকম মন্তব্যে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
সোমবার সকালে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে নারী পাচার সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। কিন্তু কলকাতায় এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) বাণীব্রত বসু বলেন, “ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর করেছেন, এক মহিলা গুলি করেছে প্রাক্তন বিধায়ককে। কল ডিটেল্স থেকে পাওয়া গিয়েছে, স্থানীয় কিছু মহিলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তাতে পাঁচ-ছ’জন মহিলার রেকর্ড মিলেছে। ড্রাগ-সহ বিভিন্ন দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে নেতার যোগাযোগ ও খুনের মধ্যে কী সম্পর্ক, তা-ও স্পষ্ট করেননি তিনি। |
স্তব্ধ চাকা।—নিজস্ব চিত্র। |
রবিবার বার্নপুরে প্রাতর্ভ্রমণে গিয়ে খুন হন দিলীপবাবু। মোটরবাইকে চড়ে আসা দুই আততায়ীর মধ্যে ওড়নায় মুখ ঢাকা এক মহিলা গুলি চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। প্রতিবাদে এ দিন আসানসোল মহকুমায় বনধ ডাকে সিপিএম। সকালে দু’টি সরকারি বাস রাস্তায় নামলে ভাঙচুর চালানো হয়।
ঘটনার পরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল সিপিএম। তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্বেই এমন ঘটেছে। সোমবার পুলিশ কমিশনার জানান, প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ মেলেনি। ব্যক্তিগত কারণেই খুন বলে মনে হয়। মাওবাদী বা মাফিয়াদের থাকার প্রমাণও মেলেনি।
রবিবারই তৃণমূল নেতা মুকুল রায় দাবি করেন, চার বছর আগে নারী পাচারের ঘটনায় দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছিল। আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথা জানান। এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) বাণীব্রতবাবুর মন্তব্য শুনে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে স্থানীয় মহিলা সংগঠনের কাজকর্ম দেখতেন দিলীপবাবু। তাই ফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, বছর পাঁচেক আগে আসানসোলে মাদক ব্যবসায় জড়িত অভিযোগে অযোধ্যা চহ্বন নামে এক জনকে ধরা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় সে জানায়, তার সঙ্গে দিলীপবাবুর যোগাযোগ ছিল। যদিও সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, ওই ঘটনার সময়ে দিলীপবাবু বিধায়ক ছিলেন। অযোধ্যা চহ্বনের মতো বহু সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ ছিল। তার অর্থ এই নয় যে তিনি মাদক পাচারে জড়িত ছিলেন।
বংশগোপালবাবু এ দিনও অভিযোগ করেন, “খুনের পিছনে রয়েছে তৃণমূলই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে শাসকদলকে বাঁচাতে আজগুবি তথ্য সাজাচ্ছে পুলিশ। বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়লে লাগাতার আন্দোলনে নামব।” আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক তথা কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “আগেই বলেছিলাম, পুলিশি তদন্তেই আসল কারণ জানা যাবে। পুলিশ কমিশনার যখন বলেছেন ব্যক্তিগত কারণেই খুন, নিশ্চয়ই তাঁরা কোনও তথ্য পেয়েছেন।” |