এসএসকেএম হাসপাতালের সামগ্রিক পরিস্থিতি ‘সত্যিই নিন্দনীয় (রিয়েলি ডিপ্লোরেবল)’— রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে লিখিত ভাবে নিজের এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে আচমকা পরিদর্শনে যান মমতা। ইমার্জেন্সির সামনে মাটিতে রোগীদের শুয়ে থাকা, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে একাধিক বন্ধ কাউন্টার, দোকানে অধিকাংশ ওষুধ না থাকা, চিকিৎসকদের জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন না লেখার প্রবণতা— এ সব কিছু দেখে মহাকরণে ফিরেই নিজের ক্ষোভ লিখিত ভাবে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তনের নির্দেশও দেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল ডাক্তারদের জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসকেএমের সমস্ত বিভাগীয় প্রধানকে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়েছেন। বলা হয়েছে, প্রেসক্রিপশন লেখেন, এমন সমস্ত চিকিৎসককে সইয়ের নীচে নিজের সম্পূর্ণ নাম লিখতে হবে এবং নামের রাবার স্ট্যাম্প মারতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকেই তাঁদের রাবার স্ট্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাস দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী এসএসকেএম পরিদর্শনে এসে চিকিৎসকদের জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখার বিষয়টিতে জোর দেওয়ার পর থেকে লুকোচুরি খেলা শুরু হয়েছে। |
বহু চিকিৎসকই ব্র্যান্ড নেম-এ ওষুধ লিখছেন। কিন্তু প্রেসক্রিপশনে এমন ভাবে সই করছেন, যাতে পরে তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সইয়ের নীচে পুরো নাম লেখা ও স্ট্যাম্প দেওয়ার কথা বললেও তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। গত মঙ্গলবার হাসপাতাল ঘুরে এসে তাঁর এক পাতার নোটে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইএনটি এবং মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের ব্র্যান্ড নেম-এ লেখা প্রেসক্রিপশন তাঁর নজরে এসেছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার নির্দেশ তারই প্রতিফলন বলে দফতর সূত্রে খবর।
বৃহস্পতিবার হাসপাতালের রোগী-কল্যাণ সমিতির পক্ষে দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী মদন মিত্র বৈঠক করেন। পরে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে একটা কমিটি গড়া হয়েছে। তারাই নজরদারি চালাবে। নিজের পুরো নাম না লিখে কেউ প্রেসক্রিপশন করতে পারবেন না। অবিলম্বে রাবার স্ট্যাম্পের অর্ডার দেওয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে আমরা কোনও রকম দেরি করতে চাই না।”
এসএসকেএমের অন্যান্য দিক নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর অসন্তোষ ছিল। গত তিন মাসে পাঁচ বার বিভিন্ন বিভাগে আগুন লেগেছে। যে কোনও সময়ে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকেরা। মঙ্গলবার এসএসকেএমে গিয়ে ভেঙে পড়া অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা। তার পরেই বৃহস্পতিবার মদনবাবু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় টাকার আর্জি জানান। অগ্নি-নিরাপত্তা খাতে ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঠেকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ দুই মেগাওয়াট বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খাতে বরাদ্দ হয়েছে তিন কোটি টাকা। হাসপাতালের সৌন্দর্যায়নেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে। সামনের বাগানটি সাজিয়ে তুলে সেখানে হবে রোগীর পরিজনদের বসার বন্দোবস্ত। এ দিন থেকেই হাসপাতালে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
পাশাপাশি, এসএসকেএমে কম দামে স্টেন্ট দেওয়ার পদক্ষেপকে রাজ্যের অন্যত্রও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই এই প্রয়াস বিভিন্ন স্তরে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ৬০ হাজার টাকার কোবাল্ট ক্রোমিয়াম স্টেন্ট এসএসকেএমে পাওয়া গিয়েছে ১৯ হাজার ৬৫০ টাকায়। এরই পাশাপাশি এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার ড্রাগ ইলিউটিং স্টেন্টের জন্য দিতে হয়েছে ৩৬ হাজার ২৫ টাকা। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের বিরোধিতা চলছে বিভিন্ন স্তর থেকেই। তাই এই উদ্যোগকে ধরে রাখাই যে এখন তাঁদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ, তাঁরা স্বীকার করেছেন সে কথাও। |