উদভ্রান্তের মতো হাসপাতালের ভিতরে-বাইরে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন নালিকুলের বাসিন্দা, ৫৭ বছরের পরাণচন্দ্র পোলের বাড়ির লোকজন। হাসপাতালে আড়াই ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, ডায়ালিসিস হবে না। অথচ, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডায়ালিসিস না-হলে পরাণবাবুর অবস্থার অবনতি হতে পারে। উত্তেজিত পরিজনেরাই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এলেন। তাতে ওই রোগী নিয়ে বেরিয়ে গেলেন অন্য হাসপাতালের দিকে।
বৃহস্পতিবারের শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল। সকাল সাড়ে দশটা থেকে হাসপাতালের জীবনানন্দ দাস ভবনে বিদ্যুৎ নেই। কারণ, ট্রান্সফর্মার খারাপ হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা তা সারাতে সারাতে আড়াই ঘণ্টা কাবার। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড গরমে আউটডোরে অপেক্ষায় থাকা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে ইন্ডোরে ভর্তি রোগী প্রত্যেকেই জেরবার। দুপুর গড়ানোর পরে ভর্তি থাকা রোগীদের অনেকেরই গরমে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। একের পর এক রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়।
ওই ভবনেই ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার হয়। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে এ দিন সকালে পিত্তথলিতে পাথরের দু’টি অস্ত্রোপচার বাতিল করে দেওয়া হয়। ডায়ালিসিসের কেন্দ্রটিও ওই ভবনে। |
অগত্যা একের পর এক ডায়ালসিস রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হতে থাকে। এমনিতেই রোগীর তুলনায় যন্ত্র কম হওয়ায় এখানে দুই শিফ্টে ডায়ালিসিস করা যায় না। সম্প্রতি এসএসকেএমের ডায়ালিসিসের রোগীদেরও এখানে পাঠানো হচ্ছে। তার উপরে বিদ্যুৎ না থাকায় এই বিপত্তি। হুগলির জলকুল থেকে ডায়ালিসিস করাতে এসেছিলেন ৪৫ বছরের বদন শীল। শম্ভুনাথে এ দিন ডায়ালিসিস বন্ধ শুনে হতাশ মুখে হাসপাতাল চত্বরের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর আত্মীয়েরা। বুঝতেই পারছিলেন না এই মুহূর্তে আর কোথায় নিয়ে যাবেন রোগীকে।
ফ্যান নেই, লিফ্ট অচল, পানীয় জল ফুরিয়ে আসছে সব মিলিয়ে এ দিন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা চূড়ান্ত নাজেহাল হয়েছেন বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, কলকাতার কেন্দ্রস্থলে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা হাসপাতালে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কথা মাথায় রেখে কোনও জেনারেটর থাকবে না কেন? এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর জবাব, “জেনারেটর তো শম্ভুনাথে রয়েছে!” তাঁর কাছে ভুল তথ্য রয়েছে জানানোর পরে তাঁর বক্তব্য, “তা হলে বলতে পারব না। থাকা তো উচিত। খবর নিয়ে দেখতে হবে কেন নেই।” কেন নেই, তার অবশ্য সোজাসাপ্টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাসপাতালের সুপার সৌমাভ দত্ত। বলেছেন, “আমাদের তো হাইটেনশন লাইন আছে। সেখানে কখনও কারেন্ট যায় না। কিন্তু খারাপ হয়েছে ট্রান্সফর্মার। সেটা পূর্ত দফতর রক্ষণাবেক্ষণ করে। আমি প্রায় দু’বছর ধরে আছি। কখনও খারাপ হতে দেখিনি। তাই জেনারেটরের কথা মাথায় আসেনি।”
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশই এখন বলছেন, শম্ভুনাথে নিওনেটাল কেয়ার সেন্টার বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ছিল না, তাই রক্ষে। এই ইউনিটগুলিতে সাধারণত বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে ঘণ্টাখানেক পর্যন্ত কাজ চালানো যায়। কিন্তু এ দিন শম্ভুনাথে বিদ্যুৎ ছিল না প্রায় টানা আড়াই ঘণ্টা। জেনারেটরের ব্যবস্থাও নেই। এমন অবস্থায় ভেন্টিলেটর বা নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট থাকলে কী মারাত্মক ব্যাপার হত, তা ভেবেই আতঙ্কিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। |