বাইরে যে স্টেন্টের দাম এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি, এসএসকেএম হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে সেটাই এ বার মিলবে ৬৭ শতাংশ ছাড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হতে চলেছে এই নতুন ব্যবস্থা। সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সরকারি তরফে তা কড়া হাতে মোকাবিলার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ দিন সকালে আচমকাই এসএসকেএম পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান ঘুরে দেখেন তিনি। যান হাসপাতাল সংলগ্ন কিছু ওষুধের দোকানেও। |
পিজি-তে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। |
ঘণ্টাখানেক পরে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে চলে এলেও হাসপাতালে থেকে যান পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। সরঞ্জাম সংস্থার প্রতিনিধিদের তিনি জানিয়ে দেন, কোনও অজুহাত চলবে না। হাসপাতালে ব্যবসা চালাতে গেলে সরকার-নির্ধারিত দামেই সরঞ্জাম দিতে হবে। এসএসকেএমের সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “কিছু স্টেন্ট আপাতত ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে দেওয়া হবে। ধাপে ধাপে সংখ্যাটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শিবানন্দ দত্ত বলেন, “বুধবার এ বিষয়ে নীতি নির্ধারণের বৈঠকেই সব চূড়ান্ত হতে চলেছে।”
মাস দুয়েক আগে এক সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে বেরিয়ে আচমকাই এসএসকেএম হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে পৌঁছে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে সে দিন তিনি জানতে পেরেছিলেন, আশপাশের ওষুধের দোকানগুলি নানা ভাবে তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। প্রেসক্রিপশনের কিছু ওষুধ ন্যায্য মূল্যের দোকানে মিলছে। যেগুলি মিলছে না, সেগুলি অন্য দোকানে কিনতে গেলে তারা তা বিক্রি করতে অস্বীকার করছে। সংশ্লিষ্ট দোকানগুলিকে এই আচরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ। তাই এ দিন ফের এসএসকেএমে আসতে হয় মমতাকে। এ দিন দোকানের কর্মীদের তিনি হুঁশিয়ারি দেন, পরিস্থিতি না বদলালে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
এ দিন এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে মাটিতে কয়েক জন পুরুষ ও মহিলাকে শুয়ে থাকতে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তিনি মদন মিত্রকে নির্দেশ দেন, প্রচণ্ড গরমে মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য অবিলম্বে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। জলের সমস্যার কথাও জানান রোগীর পরিজনেরা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত সমস্যার সমাধানে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর থেকে এক লরি জলের পাউচ প্যাকেট এসএসকেএমে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও স্থির হয়, রোগী কল্যাণ সমিতি আগামী সপ্তাহ দুয়েক সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের সামনে পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখবে। |
মঙ্গলবার সেখানে পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী। |
এর পরেই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে যান মমতা। সেখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। অবিলম্বে আরও চারটি কাউন্টার বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি। স্থির হয়, ধাপে ধাপে আরও আট-দশটি কাউন্টার বাড়ানো হবে।
এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ আসে, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নামের পরিবর্তে ব্র্যান্ডের নামই লেখা থাকছে। বিশেষত, ইএনটি এবং মেডিসিন বিভাগ থেকেই এমন প্রেসক্রিপশন বেশি আসছে বলে অভিযোগ। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো মদন মিত্র ন্যায্য মূল্যের দোকানের কর্মীদের জানিয়ে দেন, যে সব প্রেসক্রিপশনে ওষুধের জেনেরিক নাম লেখা থাকবে না, সেগুলি ফটোকপি করে রাখতে হবে। নিয়মিত তিনি সেগুলি খতিয়ে দেখবেন। এ ছাড়াও ক্রেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ শোনার জন্য ওই দোকানের পাশেই এক জন সহকারী সুপারের বসার ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন হাসপাতালের আশপাশে বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকানে ঘোরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্টই বলেন, “আগে এক বার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু আবার ওষুধ না দিয়ে রোগী ফেরতের অভিযোগ পাচ্ছি। ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কেউ কিছু ওষুধ কিনলে আপনাদের তো ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু আপনাদের কাছে ওষুধ নিতে এলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন কেন?” এর পরেও পরিস্থিতি না বদলালে দোকানগুলির লাইসেন্স বাতিল করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ওষুধ না দিয়ে রোগীর পরিজনদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডিসি (সাউথ) বিশাল গর্গকেও ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। বলেন, “ওষুধ না দিয়ে ফেরানো অপরাধ। কেউ অভিযোগ করলে তা এফআইআর করবেন।’’ আজ, বুধবার এসএসকেএমের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ত দফতর, পুরসভা, সিইএসসি ও পুলিশের সঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্যেরা বৈঠক করবেন।
|
বিমার সুযোগ
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
ট্যাক্সি চালক, রিকশা চালক, কাগজ কুড়ানি, খনি ও পয়ঃপ্রণালী সাফাই কর্মীদের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এই প্রকল্পে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পাঁচ সদস্যের একটি পরিবারের বছরের ৩০ হাজার টাকার স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা হয়। |