রাজনৈতিক বাধায় বিভিন্ন দলের কত প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তার তালিকা এখনও তৈরি করতে পারেনি রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তবে শাসক পক্ষের বাধায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যায়নি বলে বিরোধী দলগুলি যে ঢালাও অভিযোগ এনেছে, তা-ও মেনে নিতে রাজি নন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের বাধায় কেউ মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি, নাকি তাঁরা নিজেরাই তা জমা দেননি, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
যাঁরা মনোনয়নপত্র পেশ করতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলছেন, মীরাদেবী তাঁদেরই কিছুটা কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলে কোনও দলের প্রার্থীকেই যাতে বাধার মুখে পড়তে না-হয়, তার জন্য কমিশন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। বলা হয়েছিল, যাঁরা মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়ার পথে নিরাপত্তার অভাব বোধ করবেন, তাঁরা যেন নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো হন। কমিশন তাঁদের পাহারা দিয়ে মনোনয়ন পেশের দফতরে পৌঁছে দেবে। মীরাদেবীর আক্ষেপ, “ওই ঘোষণার পরেও কেউ কমিশনের নিরাপত্তা নিতে আসেননি।”
ব্লক অফিসে মনোনয়ন পেশে বাধা আসায় কমিশন অনেক ক্ষেত্রেই গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়নপত্র মহকুমাশাসকের দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কমিশন সূত্রে এ দিন বলা হয়, বীরভূম ও কোচবিহারের সব ব্লকের মনোনয়নপত্র মহকুমাশাসকের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই দুই জেলা থেকে মনোনয়ন পেশ ঘিরে গোলমালের খবরে কমিশন উদ্বিগ্ন।
যে-ন’টি জেলায় মনোনয়ন পেশের কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে তা পরীক্ষার দিনে নতুন করে গোলমালের আশঙ্কা করছে কমিশন। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে তারা। তবে তাদের চাহিদামতো নিরাপত্তা বাহিনী পাওয়া যাবে কি না, সেই ব্যাপারে রাজ্য সরকার এ দিনও কিছু জানায়নি বলে কমিশন সূত্রের খবর। যদিও বুধবারেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাহিনী দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। ১০ জুনের পরে এ ব্যাপারে কমিশন আবার আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। ওই দিই সব জেলায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হচ্ছে।
প্রথম দফার ন’টি জেলা (পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা)-য় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুধবার পর্যন্ত কত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, কমিশন এ দিন তার পরিসংখ্যান দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ওই ন’টি জেলায় ২৫,৮৪৬টি আসনের জন্য সিপিএমের ২৬,৬০০ জন, সিপিআইয়ের ১,২৭৮ জন, আরএসপি-র ৭৮০ জন, ফরওয়ার্ড ব্লকের ১৩৪৬ জন, তৃণমূলের ৩৭,০১২ জন এবং কংগ্রেসের ১০,৩৩৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতির ৫,৭৯২টি আসনের জন্য মনোনয়ন পেশ করেছেন সিপিএমের ৫,৩৩৯, সিপিআইয়ের ২৪৭, আরএসপি-র ১৪৮, ফরওয়ার্ড ব্লকের ২৫৮, তৃণমূলের ৮,০৯০ এবং কংগ্রেসের ২,৬৩৯ জন। জেলা পরিষদের ৫১৪টি আসনের জন্য সিপিএমের ৭০১, সিপিআইয়ের ৪১, আরএসপি-র ২৪, ফরওয়ার্ড ব্লকের ৪১, তৃণমূলের ৯৯৯ এবং কংগ্রেসের ৫৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তবে বিরোধীরা কোথায় কোথায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, কোথায় কোথায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসক দল জিতে গিয়েছে, কমিশনের এই তথ্য থেকে তা বলা সম্ভব নয়। কমিশন সূত্রে বলা হয়, ১০ জুন মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পরেই চিত্রটি পরিষ্কার হবে। অনেক আসনে একই দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাই মোট আসনের থেকে এই মুহূর্তে কোনও কোনও দলের প্রার্থীর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার ও পরীক্ষার পরেই আসল চিত্রটি বোঝা যাবে। |