পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টকে এ বার কিঞ্চিৎ সমস্যায় ফেলে দিলেন এক আবেদনকারী।
প্রথম দফার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে বুধবারই। যাঁরা তা দিতে পারেননি, এ বারের নির্বাচনে তাঁদের আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে না। নির্বাচনী বিধিতে এমনই বলা আছে। কিন্তু ওই সব ইচ্ছুক ব্যক্তি যাতে এ বারেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, হাইকোর্টকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে বলে আর্জি জানিয়ে বৃহস্পতিবার মামলা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তুলসীদাস মুখোপাধ্যায়।
আইনত সেটা কি করে সম্ভব?
আবেদনকারীর যুক্তি, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, ইচ্ছুক সব লোকই যাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেন, তা সুনিশ্চিত হবে রাজ্য সরকারকে। কিন্তু সেই নির্দেশ পালিত হয়নি। তাই এ বার হাইকোর্টকেই তার নিজের নির্দেশ মানতে হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই হাইকোর্টের এটা করা জরুরি বলে আদালতে জানিয়েছেন আবেদনকারী। তাঁর দাবি, না হলে হাইকোর্ট নিজেই নিজের নির্দেশ অমান্য করবে! কংগ্রেসের কারা কারা প্রথম দফার নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, এ দিন সেই তালিকাও আবেদনপত্রের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তুলসীবাবু।
এমন আর্জি শুনে প্রথমে বিরক্তই হয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। তিনি জানতে চান, “এ সব কী হচ্ছে! পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কত মামলা হবে?” বার বার পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলার পিছনে কারা রয়েছে, এ দিন সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন আবেদনকারীর আইনজীবীরা। একজন বলেন, “সবাই যাতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, সেই দায়িত্ব হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে দিয়েছে। রাজ্য সরকার তা না মানায় ভুক্তভোগীরা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। এতে অন্যায়ের কী আছে?” প্রধান বিচারপতি বলেন, “হাইকোর্ট তো মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। যদি সেই নির্দেশ পালিত না হয়, তা হলে আদালত অবমাননার মামলা করা হোক। নতুন মামলা কেন?” আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে মামলায় দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকার। তাঁরা ওই মামলায় অংশ নেননি। তাই তাঁরা আদালত অবমাননার মামলা করতে পারেন না। আবেদনকারীকেও ওই মামলার অংশীদার করা হোক।
কেন ইচ্ছুক প্রার্থীরা সবাই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আবেদনকারী। তাঁর আইনজীবী আদালতকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় শাসক দল মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিচ্ছে। প্রার্থীদের কোনও নিরাপত্তা দিচ্ছে না রাজ্যের পুলিশ। কংগ্রেস বার বার রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য-সহ সমস্ত বিষয় জানিয়েছে। দলের সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারকে পুরো বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবেদনকারীর আর্জি, এই অবস্থায় যাতে সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা হোক। আজ, শুক্রবার আদালত মামলাটি শুনবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
কিন্তু হাইকোর্ট কি আবেদনকারীর আর্জি মেনে সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে? কমিশন সূত্রে বলা হয়, প্রথম দফার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। যে সব ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁদের জন্য ফের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ঠিক করতে গেলে, নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। এতে গোটা ভোট প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন তাদের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে বলে মনে করছেন কমিশনের কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, যেখানে যেখানে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি, সেখানে নির্বাচন স্থগিত করে দিতে পারে কমিশন। পরে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেখানে নির্বাচন করানো যেতে পারে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যবস্থা কমিশন নিতে পারে। রাজ্য সরকার পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে না পারলে যেখানে যেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে না বলে কমিশন মনে করবে, সেখানেও তারা ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখতে পারে।
তবে কংগ্রেস নেতার আর্জির নিষ্পত্তি হাইকোর্ট কী ভাবে করে, আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে নির্বাচন কমিশন। |