|
|
|
|
কাজ চলায় ট্রেন-বিভ্রাট, দুর্ভোগ বাড়ল বিক্ষোভে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নতুন লাইনে সিগন্যাল ব্যবস্থার কাজ চলায় সপ্তাহখানেক ধরে এমনিতেই দক্ষিণ-পূর্ব রেলে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তাতে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের। বৃহস্পতিবার সকালে এক শ্রেণির যাত্রী বিক্ষোভ-ভাঙচুর চালানোয় সেই দুর্ভোগ চরমে ওঠে। কয়েক ঘণ্টার জন্য হাওড়া-খড়্গপুর শাখার ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। রেল সূত্রের খবর, বেলার দিকে বিক্ষোভ উঠলেও অফিসের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় অনেক নিত্যযাত্রীকে মাঝপথ থেকেই ফিরে যেতে হয়।
কী হয়েছিল এ দিন? রেল সূত্রের খবর, সময়মতো ট্রেন না-পাওয়ায় সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এক দল যাত্রী কোলাঘাট স্টেশনে অবরোধ শুরু করেন। হাওড়ামুখী খড়্গপুর লোকাল আটকে দেওয়া হয়। উত্তেজিত জনতার ছোড়া পাথরে ট্রেনের কিছু জানলার কাচ ভেঙে যায়। ভেঙে পড়ে চালকের কেবিনের কাচও। রেলের এক আধিকারিক জানান, বিক্ষোভকারীরা চালক ও গার্ডকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিলে তাঁরা ট্রেন ছেড়ে পালিয়ে যান। ফলে ট্রেনটি দীর্ঘ ক্ষণ কোলাঘাট স্টেশনেই দাঁড়িয়ে থাকে। আটকে যায় তার পিছনে থাকা ট্রেনগুলিও।
এক রেলকর্তা জানান, কোলাঘাটে বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়েসুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করছিলেন রেলকর্মীরা। তখনই যাত্রী-বিক্ষোভ শুরু হয় দেউলটি স্টেশনে। সেখানে অনুরোধ-উপরোধ করে অবরোধ তুলতে বেলা সাড়ে ১১টা বেজে যায়। বেলা ১টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভ-অবরোধের জেরে বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনও দেরিতে হাওড়ায় পৌঁছেছে। পাল্টাতে হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছাড়ার সময়ও। |
|
যাত্রী বিক্ষোভের জেরে দাঁড়িয়ে ট্রেন। কোলাঘাট স্টেশনে। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু এই অবস্থা কেন? এত দিন পাঁশকুড়া থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত দু’টি লাইন ছিল। গত ৫-৬ বছরে প্রচুর ট্রেন বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়, পরিষেবার মান উন্নত করতেই তৃতীয় লাইন পাতা হয়েছে। সেই নতুন লাইনে সিগন্যালের কাজ চলছে। তাই সপ্তাহখানেক ধরে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বুধবারের মধ্যে পাঁশকুড়ায় কাজ শেষ হয়ে যায়। এখন পাঁশকুড়া থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনে তৃতীয় লাইনটিকে জোড়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। নতুন ব্যবস্থার সুবিধা পেতে হলে কাজ চলাকালীন এই অসুবিধাটুকু মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন এক রেলকর্তা।
রেলেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিনের গোলমালের জন্য নতুন লাইনের একটি পয়েন্টের বিভ্রাটই দায়ী। রেলকর্তাদের বক্তব্য, কোথাও নতুন যন্ত্র বসানো হলে তার মহড়ার জন্য কয়েক দিন সময় লাগে। প্রথম প্রথম নতুন ব্যবস্থার কোনও না কোনও অংশ বিগড়েও যেতে পারে। এক রেলকর্তার কথায়, “এ দিন সেটাই হয়েছিল। খড়্গপুর থেকে আসা একটি মালগাড়ি পাঁশকুড়া থেকে হলদিয়ার দিকে বাঁক নিতে যাচ্ছিল। তখনই নতুন লাইনের একটি পয়েন্ট আটকে যায়। তাতে ভোরের ট্রেনগুলির দেরি হতে থাকে। সকালের যাত্রীরা ঝামেলায় পড়েন।” দিনের সূচনায় সেই যে বিভ্রাট শুরু হয়েছিল, তার প্রভাব পড়ে পরের ট্রেনগুলিতেও। প্রায় সব ট্রেনই দেরি করতে থাকায় ধৈর্য হারিয়ে অবরোধ-বিক্ষোভ শুরু করেন যাত্রীদের একাংশ।
নতুন কাজের জন্য ১১ জুন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল যে স্বাভাবিক থাকবে না, যাত্রীদের তা বারেবারেই জানানো হয়েছে বলে রেলের দাবি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “ওই কাজের জন্য ট্রেন চলাচল ব্যাহত হবে বলে আগেই বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে। নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীদেরই উপকার হবে। তাই যাত্রীদের আপাতত কয়েক দিন অসুবিধা সহ্য করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।” রেলকর্তারা জানান, সব হাওড়া-পাঁশকুড়া লোকালই এ দিন থেকে ফের চালু করা হয়েছে। তবে ওই শাখায় ১১ জুন পর্যন্ত অন্য ২৩টি লোকাল ও তিনটি মেমু লোকাল বাতিল থাকবে। হাউর, শ্যামচক, বালিচক স্টেশনে কাজ শেষ হলে সব লোকালই আবার চালু হয়ে যাবে।
|
পুরনো খবর: কাল থেকে ট্রেন বন্ধ ১৩ দিন, ক্ষিপ্ত বাঁকুড়া-পুরুলিয়া |
|
|
|
|
|