|
|
|
|
শেষ বেলায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের, ক্ষোভ পূর্বে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা পার হয়েছে বুধবার। এই সময়ের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ৬০টি আসনে শাসকদলের প্রার্থী হতে চেয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন ১১১ জন। তৃণমূলের টিকিট কার ভাগ্যে, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা চলছিল। অবশেষে বৃহস্পতিবার দলীয় ভাবে জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। যথারীতি সেই তালিকায় নাম কেটেছে অনেকের। বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য আনন্দময় অধিকারীর মতো সুতাহাটার হেভিওয়েট নেতাও। আনন্দময়বাবু যে আসনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন, সেখানে দল পছন্দ করেছে সুতাহাটারই কমলেশ চক্রবর্তীকে। তা জেনে আনন্দময়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “এই তালিকা কে বানিয়েছে জানি না। তবে এই কাজ দলবিরোধী। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি হল, আসন সংরক্ষণ না হলে গত বার যাঁরা জয়ী প্রার্থী ছিলেন, এ বারও তাঁরাই ভোটে লড়বেন।”
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ৫৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ৩৫টি আসনে, তৃণমূলের জোটসঙ্গী এসইউসি ১ টি আসনে। বাকি ১৭টি আসনে জিতেছিল বামফ্রন্ট। জেলা পরিষদের সভাধিপতি রণজিৎ মণ্ডল খেজুরি থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর আসন খালি হয়। কোলাঘাট থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য হায়দার মল্লিক মারা যাওয়ায় জেলা পরিষদে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা কমে হয় ৩৩। আবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লক থেকে সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে জেতা ননীগোপাল কয়াল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তৃণমূলের সদস্য হয় ৩৪।
এ বার জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা হয়েছে ৬০। কিন্তু তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী তালিকায় রয়েছে বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১১ জন। অর্থাৎ ২৩ জন সদস্য বাদ পড়েছে। বাদ পড়েছেন খোদ জেলা সভাধিপতি গান্ধী হাজরা, শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য দেবব্রত মণ্ডল, স্বাস্থ্য কর্মাধক্ষ্য রফিকুল হাসান, খাদ্য কর্মাধক্ষ্য মিঠু অধিকারী, কৃষি কর্মাধক্ষ্য বিমলকৃষ্ণ নন্দী, শিশু ও নারী উন্নয়ন কর্মাধ্যক্ষ অপর্ণা ভট্টাচার্য। |
পরীক্ষা:
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই ব্লকে ব্লকে পাঠানো হয়েছে ব্যালট বাক্স।
অনেক বাক্সেরই ‘লক’ ঠিকমতো কাজ করছে না। সেগুলি ফেরত পাঠানো হয়েছিল
জেলায়।
মেরামতের পর এমনই ৪৮টি ব্যালট বাক্স পাঠানো হল মেদিনীপুর সদর ব্লকে।
বৃহস্পতিবার
চলছে তারই পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
এঁরা অবশ্য মনোনয়ন পত্র জমাও দেননি। কিন্তু যাঁরা মনোনয়নপত্র দিলেন, অথচ টিকিট পেলেন না তারা কী ভাবছেন? গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রেশ কি এসে পড়বে ভোটের ময়দানেও? তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে এদিন বলেন, “সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। দলের প্রদেশ কমিটির অনুমোদনের পর এ দিন সর্বজনীন ভাবে প্রকাশ করা হল। যাঁরা মনোনয়ন দিয়েছেন, অথচ তালিকায় নাম নেই, দলীয় শৃঙ্খলা মেনেই তাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।”
বাস্তবে বাদ পড়া প্রার্থীরা অবশ্য অন্য কথাই বলছেন। যেমন পাঁশকুড়ার বিধায়ক ওমর আলির ছেলে মোসলেম আলি ও তাঁর স্ত্রী এ বার জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন পাঁশকুড়া থেকে। দল স্ত্রী ফিরোজা বিবিকে প্রার্থী তালিকায় রাখলেও মোসলেমকে বাদ দিয়েছে। ওই আসনে গত বারের জয়ী প্রার্থী অজিত সামন্তকেই এ বার বেছে নিয়েছে দল। ক্ষুব্ধ মোসলেমের বক্তব্য, “দলকে জানিয়েই প্রার্থী হয়েছিলাম। মুকুল রায়কেও জানিয়েছিলাম। তারপরও এমন হল কী করে জানি না। তবে, এখনও আশা ছাড়িনি। স্ত্রী-র আসন ছেড়ে দিতে পারি দরকার হলে।” দল স্বীকৃত প্রার্থী অজিত সামন্ত বলেন, “ওই আসনে গত বার আমি জিতেছিলাম। তাই এ বারও আমারই ভোটে দাঁড়ানোর কথা। দলের একাংশ ভুল বোঝাচ্ছে ওকে।”
কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লক থেকে জেলা পরিষদের আসনে সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য প্রীতিরঞ্জন মাইতি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় অবশ্য মামুদ হোসেনেরই নাম রয়েছে। মামুদ হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রীতিরঞ্জন মাইতি এখনও দলের প্রার্থী তালিকা হাতে পাননি জানিয়ে বলেন, “আমাদের বলা হয়েছিল, আসন সংরক্ষণ না হলে যে যার আগের আসনে প্রার্থী হতে পারবে। সেই মতো আমি মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলাম।”
সোমবার, মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত দর কষাকষি চলবে। তারপরেই পরিষ্কার হয়ে যাবে লড়াইটা কার সঙ্গে কার। |
একনজরে মনোনয়ন |
পশ্চিম মেদিনীপুর
• জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা ৬৭। মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৩৯৪।
তৃণমূল- ১৫৭, কংগ্রেস- ৫১, সিপিএম- ৭৭, সিপিআই- ৬, ফরওয়ার্ড ব্লক- ২, বিজেপি- ৩৫, অনান্য- ৬৬।
• পঞ্চায়েত সমিতির আসন সংখ্যা ৭৯৮। মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২৩৭২।
তৃণমূল- ১১৪৯, কংগ্রেস- ২০৭, সিপিএম- ৬০২, সিপিআই- ৬৩, ফরওয়ার্ড ব্লক- ১০, বিজেপি- ১০৪, অনান্য- ২০৭
• গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন সংখ্যা ৩৮৪৬। মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১০০৯০।
তৃণমূল- ৫১০৮, কংগ্রেস- ৭৭৮, সিপিএম- ২৪৯৩, সিপিআই- ২৬৮, ফরওয়ার্ড ব্লক- ৩৪,
আরএসপি- ১৪, বিজেপি- ৩১৭, অনান্য- ১০৭৮ |
|
পূর্ব মেদিনীপুর
• জেলা পরিষদে মোট আসন ৬০। মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৩৯০।
তৃণমূল ১১১, কংগ্রেস ৬৫, বিজেপি ৫৩, বামফ্রন্ট ৭৬, এসইউসি ৫৯, অন্যান্য ১০, নির্দল ১৬।
• পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ৬৬১। মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ২৫৪৯। তৃণমূল ১০২৫,
কংগ্রেস ৩২৫,
বিজেপি ১৮৯, বামফ্রন্ট ৭৩৩, এসইউসি ৭৪, অন্যান্য ১৫, নির্দল ১৮৮।
• পঞ্চায়েতে মোট আসন ৩৩৭৮। মনোনয়ন জমা পড়েছে ১১,৩৫১। তৃণমূল ৪৫০৮,
কংগ্রেস ১১৪১, বিজেপি ৬৪৩, বামফ্রন্ট ৩৬৯৫, এসইউসি ২২৭, অন্যান্য ৩৬, নির্দল ১১০১। |
|
|
|
|
|
|