|
|
|
|
বিপাকে পুরী-পর্যটকেরাও |
কাল থেকে ট্রেন বন্ধ ১৩ দিন, ক্ষিপ্ত বাঁকুড়া-পুরুলিয়া
অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
একটানা বেশি দিন ট্রেন বন্ধ রাখার জন্য অন্তত তিন মাস আগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটাই রেলের নিয়ম।
কিন্তু যথেষ্ট আগে না-জানিয়ে হাওড়া থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বেশির ভাগ মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনই কাল, বৃহস্পতিবার থেকে ১৩ দিন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। প্রতিবাদে শুরু হয়ে গিয়েছে বিক্ষোভও। মেন লাইনের সঙ্গে নতুন পাতা তৃতীয় লাইন যুক্ত করার জন্য ১১ জুন পর্যন্ত ওই দুই জেলা ছাড়াও হাওড়া-পুরী রুটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ রাখা হবে।
ট্রেন বন্ধের ব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিজ্ঞাপন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও দেখেছেন। তিনি বলেন, “এটা করা যাবে না। রেলের কাজ করতে হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু যাত্রীদেরও যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।” তিনি ইতিমধ্যেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে রেলেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।
হঠাৎ এত দিন ট্রেন বন্ধ কেন?
রেল সূত্রের খবর, হাওড়া থেকে খড়্গপুর পর্যন্ত তৃতীয় লাইনের কাজ শ্যামচক পর্যন্ত শেষ হয়েছে। ওই লাইনটিকে মেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ‘নন-ইন্টারলক’ ব্যবস্থার কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। সেই কাজের জন্য ৩০ মে থেকে বেশির ভাগ ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ওই কাজ চলবে ১১ জুন পর্যন্ত। ওই কাজ হবে পাঁশকুড়া, হাউর, বালিচক ও শ্যামচক স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকায়। যে-সব ট্রেন বাতিল হচ্ছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে শিয়ালদহ-পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস (ছ’দিন বাতিল), হাওড়া-ভুবনেশ্বর জনশতাব্দী এক্সপ্রেস (দু’দিন), হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস (১৩ দিন), পুরী-দিঘা (দু’দিন), রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস (১৩ দিন), আরণ্যক এক্সপ্রেস (১৩ দিন), বাঁকুড়া-শালিমার এক্সপ্রেস (১৩ দিন) ইত্যাদি। হাওড়া থেকে খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঘাটশিলা পর্যন্ত চলা মেমু ও লোকাল ট্রেনও বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংবাদপত্রে ট্রেন বন্ধের বিজ্ঞাপন দেখেই বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এমনিতেই ওই দু’টি জেলায় কম ট্রেন চলে। তার উপরে টানা ১৩ দিন বেশির ভাগ ট্রেন বন্ধ রাখলে কলকাতার সঙ্গে রেলপথে দু’টি জেলারই যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বেলদা, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার বেশ কিছু বাসিন্দা মঙ্গলবার খড়্গপুরে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের অফিসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, এত দিন ট্রেন বন্ধ রাখা যাবে না। কাজের দিনে সকাল-বিকেল অন্তত একটি করে ট্রেন চালাতে হবে। তাঁরা অধীরবাবুর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
নিত্যযাত্রীদের রোজকার প্রয়োজন তো আছেই। তার উপরে গরমের ছুটিতে বহু মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন। ভিড় হচ্ছে পুরী ও বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। তা সত্ত্বেও যথেষ্ট আগে না-জানিয়ে ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্তে রেলের কর্তা-কর্মীদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। রেলকর্মীদের বক্তব্য, যে-সব ট্রেন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে, বহু যাত্রী সেগুলিতে আগাম আসন সংরক্ষিত করে রেখেছেন। নির্ধারিত দিনে স্টেশনে পৌঁছে যাত্রীরা ট্রেন না-পেলে গোলমাল হতে পারে।
রেলের নিয়ম বলছে, এই ধরনের বড় কাজে দীর্ঘ দিন ট্রেন বন্ধ রাখতে হলে প্রায় তিন মাস আগে থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রেও সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলির টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়। রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, কোনওটাই করা হয়নি।
অভিযোগ স্বীকার করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “এই কাজে অনেক সংস্থা যুক্ত। সমন্বয়ের অভাবে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। যাত্রীদের যাতে বেশি অসুবিধায় পড়তে না-হয়, তার চেষ্টা চলছে।” |
|
|
|
|
|