|
|
|
|
পার্টি কংগ্রেস থেকে নজর ঘোরাতেই হামলা সুকমায়
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
কেন্দ্রীয় কমিটির অর্ধেক নেতা হয় জেলে বা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। পুলিশি অভিযানের ধাক্কায় অনেক এলাকা হাতছাড়া। এই পরিস্থিতিতে সিপিআই (মাওবাদী) এ বছরও পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সংগঠনের অন্দরেই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মাওবাদীদের দশম পার্টি কংগ্রেস হওয়ার কথা ছিল গত বছর। কিন্তু তা তারা করে উঠতে পারেনি। এ বার বর্ষার সময় সেই পার্টি কংগ্রেস যাতে করা যায়, সে জন্য তলে তলে প্রস্তুতি চলছে। এই সময়টা বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ হল, বর্ষার সময় যৌথ বাহিনীর অভিযান বন্ধ থাকে। কিন্তু মাওবাদীদের পার্টি কংগ্রেসের খবর পেলে যৌথ বাহিনী যে বসে থাকবে না, তা বিলক্ষণ জানেন দলের নেতারা। তাই সে দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতেই সুকমায় হামলা হল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য নিশ্চিত, এ বারের বর্ষাতেও মাওবাদীরা পার্টি কংগ্রেস করতে পারবে না। কারণ মাওবাদীদের ৩৯ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত পাঁচ বছরে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি মিলিয়ে অন্তত ২৫ জন হয় ধরা পড়েছেন না হলে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন। পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির যে সব নেতা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছেন, তাঁদের গতিবিধি যথেষ্ট কমে গিয়েছে। বস্তার-দণ্ডকারণ্যের যে সব এলাকা বহু বছর ধরে মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ছিল, সেখানেও ধীরে ধীরে পা রাখছে যৌথ বাহিনী।
গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতেই মাওবাদীরা রাজনৈতিক নেতাদের কনভয়কে নিশানা করছে। যদিও মাওবাদী দমন বিভাগের এক কর্তার বক্তব্য, “রাজনৈতিক নেতাদের উপর হামলা চালিয়ে ওরা উল্টে নিজেদের বিপদ ডেকে আনল। কারণ পুলিশ বা সিআরপি-র জওয়ানদের উপর হামলা হলে সরকারের শীর্ষস্তরে যত ধাক্কা লাগে, রাজনৈতিক নেতাদের রক্ত ঝরলে তার থেকে অনেক বেশি কাঁপুনি ধরে। হতে পারে, এটাই মাওবাদীদের শেষের শুরু।”
সেই শেষের শুরুটা তাড়াতাড়ি করতেই ছত্তীসগঢ় সরকারকে রণকৌশল বদলাতে বলছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ছত্তীসগঢ় সরকার এত দিন যা করেছে, তা হল বিপুল পরিমাণে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়ে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় দমন অভিযান চালানো। ফলে প্রায়ই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আর যখন মাওবাদীরা সফল হয়েছে, তখন এক সঙ্গে ৭৬ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। এই অবস্থায় দরকার হল ‘শর্ট সার্জিকাল অপারেশন’। যে ক্ষেত্রে মাওবাদী নেতাদের অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য থাকবে। তার ভিত্তিতে মূলত সিআরপি-র কোবরা বাহিনীর স্নাইপারদের নিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল তৈরি হবে। যারা অপারেশন চালাবে। যেমনটা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে কিষেণজির ক্ষেত্রে। ছত্তীসগঢ়ে এখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৩০ হাজার জওয়ান রয়েছে। সুকমার ঘটনার পরে আরও ২ হাজার জওয়ান পাঠানো হচ্ছে। আজ স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান আসিফ ইব্রাহিম রায়পুরে গিয়ে ছত্তীসগঢ়ের পুলিশ-কর্তাদের সেই বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করবেন।
মাওবাদী দমন বিভাগের কর্তাদের বিশ্বাস, সরকার কৌশল বদলালে মাওবাদীরা এই বর্ষাতেও পার্টি কংগ্রেস করে উঠতে পারবে না। তা হলে দিশেহারা হয়ে পড়বে সংগঠন। কারণ পার্টি কংগ্রেসেই ঠিক হবে, রাজ্যে রাজ্যে যৌথ অভিযানের মুখে দলের নতুন রণনীতি কী হবে। দলের শীর্ষনেতাদের প্রায় সকলেরই বয়স ষাটের কোঠায়। কী ভাবে নতুন প্রজন্মকে তুলে আনা হবে, কারা নতুন দায়িত্ব নেবেন, সেগুলো ঠিক হবে পার্টি কংগ্রেসে। নতুন ক্যাডার নিয়োগ নিয়েও ভাবতে হবে। কারণ অর্থ-পুনর্বাসনের আশায় নিচুতলার ক্যাডাররা অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন। অস্ত্রশস্ত্রের জোগানও একটা চিন্তার বিষয়। কারণ উত্তর-পূর্বের জঙ্গি-সংগঠনের সঙ্গে মাওবাদী আঁতাত ধরে ফেলেছে পুলিশ। অস্ত্রশস্ত্র তৈরির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সাডানালা রামকৃষ্ণ কলকাতায় ধরা পড়েছে। এই অবস্থায় ক্রমশই ভাঙন ধরছে সংগঠনে।
প্রতি বছরই বর্ষায় জঙ্গলে অভিযান বন্ধ রাখে যৌথ বাহিনী। আকাশ থেকেও নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। কিন্তু সংগঠনেই যখন ভাঙন, তখন অরণ্যের আচ্ছাদন মাওবাদীদের কতটা সাহায্য করে, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|