|
|
|
|
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে ভূস্বর্গেও জাল সুদীপ্তের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অন্য অনেক রাজ্যেই সারদা গোষ্ঠী ব্যবসা বাড়াচ্ছিল বলে অভিযোগ। এমনকী জম্মু-কাশ্মীরেও নিজের অর্থ লগ্নি সংস্থার ব্যবসা ফাঁদতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। এবং সেই জন্য সেখানে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টও খুলে ফেলেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সারদা-কর্ণধার ভূস্বর্গে কোনও অফিস খুলে উঠতে পারেননি বলেই তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন। বাংলায় ব্যবসা লাটে ওঠার পরে পলাতক সুদীপ্ত কাশ্মীরেরই সোনমার্গের একটি হোটেলে ধরা পড়েন ২৩ এপ্রিল।
গোয়েন্দারা জানান, শুধু কাশ্মীরে নয়, আমদাবাদ-মুম্বইয়েও বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে সুদীপ্তের। তবে ওই সব জায়গায় কেন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন করেও সুদীপ্তের কাছ থেকে স্পষ্ট জবাব পাননি তদন্তকারীরা।
কেন কাশ্মীর-সহ উত্তর ভারতে ব্যবসা সরাতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত?
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ রাজ্যে ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে বলে আশঙ্কাই করেই সারদা-প্রধান উত্তর ও পশ্চিম ভারতে ব্যবসা সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। এবং সেই কারণেই উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন শহরে একের পর এক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি। পুলিশের সন্দেহ, ওই সব অ্যাকাউন্টে সারদার টাকা সরানো হয়ে থাকতে পারে। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, “সেই কারণেই ওই সব অ্যাকাউন্টের সবিস্তার তথ্য চেয়ে পাঠানো হচ্ছে।” |
|
শেক্সপিয়র সরণিতে তখন চলছে পুলিশি তল্লাশি।
বাইরে পুলিশ ভ্যানে সুদীপ্ত সেন। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র |
কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে সারদার সম্পত্তির পরিমাণ কত, তা খতিয়ে দেখছে লালবাজার। পুলিশি সূত্রের খবর, সুদীপ্ত এবং সংস্থার অন্যতম কর্ত্রী দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এ দিন বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সারদার শেক্সপিয়র সরণির অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে কিছু নথি এবং কম্পিউটারের ১০টি হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই অফিস থেকেই সারদার ব্যবসা বাড়তে শুরু করে। ওখানে মূলত বিজ্ঞাপন ও ভ্রমণ সংস্থার সদর দফতর ছিল। এ দিন ভ্রমণ সংস্থার দফতরে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
যত্রতত্র সুদীপ্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার রহস্যভেদের পুলিশি চেষ্টা তো চলছেই। সেই সঙ্গে সারদার আয়কর ফাঁকি নিয়েও এ বার তদন্তের সুপারিশ করতে চলেছে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই জেলায় সারদা গোষ্ঠীর ৫১টি অফিসে কর্মীদের বেতন থেকে আয়করের টাকা কাটা হলেও তা আয়কর অফিসে জমা পড়েনি। এই ব্যাপারে আয়কর দফতরকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন। পুলিশি সূত্রের খবর, আয়কর দফতরে টাকা জমার বিষয়টি সুদীপ্ত ও দেবযানী দেখভাল করতেন বলে জেরার মুখে জানিয়েছেন বারুইপুরের ডিভিশনাল ম্যানেজার অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা। তিনি সুদীপ্তের মুখোমুখি বসেই তাঁর বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের জবাব দিতে চেয়েছেন। তবে কবে তাঁদের মুখোমুখি বসানো হবে, এ দিন পর্যন্ত তদন্তকারী অফিসারেরা তা জানাননি।
জেলা পুলিশের খবর, এএসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের নেতৃত্বে একটি দল বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বুম্বাকে নিয়ে বারুইপুর অফিসে তল্লাশি চালায়। তদন্তকারীরা জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে গত তিন বছরে প্রায় ২৩০ কোটি টাকা তুলেছে সারদা। ওই টাকার ৪০% অর্থাৎ ৯২ কোটি টাকা এজেন্টদের কমিশন বাবদ দেওয়া হয়েছে। ওই টাকার উপরে আয়কর কেটেছে সারদা। কিন্তু তদন্তে জানা গিয়েছে, সেই টাকা আয়কর দফতরে জমা দেননি সুদীপ্ত। এক পুলিশকর্তা বলেন, “সারদার সব লগ্নি অফিসের নথি খতিয়ে দেখলে কোটি কোটি টাকার আয়কর ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়বে। তাই আয়কর দফতরকে চিঠি লিখে তদন্তের সুপারিশ করা হচ্ছে।”
|
পুরনো খবর: ১৫টি ব্যাঙ্কে আড়াইশো অ্যাকাউন্ট কী ভাবে খুলল সারদা |
|
|
|
|
|