গোয়ার বৈঠকেই যখন দলের একাংশ নরেন্দ্র মোদীকে প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরার দাবি তুলছে, তখন তাকে আটকাতে চূড়ান্ত সক্রিয় বিজেপির মোদী-বিরোধীরা।
মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ব্যাপারে ক’দিন আগেই প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিলেন উমা ভারতী। তাঁর বক্তব্য ছিল, তিনি লালকৃষ্ণ আডবাণীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। গোয়ার বৈঠকের আগে ফের নিজের মনোভাব স্পষ্ট করলেন উমা। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহকে চিঠি লিখে তিনি জানিয়ে দিলেন, কর্মসমিতির সদস্য হয়েও এই প্রথম তিনি গোয়ার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যেতে পারছেন না। আডবাণী ঘনিষ্ঠ আর এক নেতা যশোবন্ত সিংহও গোয়ায় অনুপস্থিত থাকতে পারেন। গরহাজিরের তালিকায় থাকতে পারেন বরুণ গাঁধী, রবিশঙ্কর প্রসাদরাও। আডবাণীর আর এক অনুগামী যশবন্ত সিন্হাও আজ জানিয়েছেন, মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান নিয়োগ করার জন্য গোয়ার কর্মসমিতির বৈঠক উপযুক্ত নয়। দলের মোদী-বিরোধী নেতারা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি চিন্তন-শিবিরেরও
প্রস্তাব দিচ্ছেন।
মোদী-বিরোধীরা যতই সক্রিয় হোন, দলের তৃতীয়-চতুর্থ সারির সিংহভাগ নেতা ইতিমধ্যেই গোয়ায় পৌঁছে মোদীর হয়ে সুর চড়াতে শুরু করে দিয়েছেন। এমনকী গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পরিক্কর নিজেই আজ বলেছেন, “এই বৈঠকেই নরেন্দ্র মোদীকে কমিটির প্রধান করার কথা ঘোষণা করে দেওয়া উচিত। যদি দল এখনই ঘোষণা করতে না চায়, তা হলে অন্তত বলে দেওয়া উচিত কবে তাঁকে এই কমিটির প্রধান করা হবে। কবে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হবে। নরেন্দ্র মোদীই দলকে ক্ষমতায় আনতে পারেন। কর্মীদের মধ্যে তাঁকে ঘিরে বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে। দল যদি সেই দিকে কোনও ইঙ্গিত দেয়, তা হলেই কর্মীদের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে।” নিতিন গডকড়ীকে সভাপতি করার আগে সেই পদে এই পরিক্করের কথাই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আডবাণীকে ‘পুরনো-আচার’ বলে মন্তব্য করায় সেই পদ পাননি পরিক্কর। আজ আডবাণীর মোদী-বিরোধিতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দলে গণতন্ত্র রয়েছে বলেই ভিন্ন সুর আসে। কিন্তু গোয়ার বৈঠকেই মোদীর নাম ঘোষণা করে দেওয়া উচিত।”
গত কাল উপনির্বাচনগুলির ফল আসার পর থেকেই মোদী শিবিরের উৎসাহ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে আডবাণী মোদীর জনপ্রিয়তাকে লঘু করে দেখিয়ে বারবার যুক্তি দিয়ে এসেছেন, শুধু দলে নয়, দলের বাইরে গ্রহণযোগ্যতাও জরুরি। এবং সে ক্ষেত্রে নীতীশ কুমারের বিরোধিতাকেই সামনে এনেছেন তিনি। আডবাণীর এই যুক্তি উড়িয়ে বিহারের বিজেপি নেতা রাজীব প্রতাপ রুডি আজ বলেন, “মোদীর প্রয়োজনীয়তা শুধু বিজেপিতে নয়, জেডি(ইউ)-তেও রয়েছে। মোদী যেমন গুজরাতের নেতা, তেমনই বিহারেরও নেতা।” বিহারের মোদী-পন্থী বিজেপি নেতারা স্থির করেছেন, এ বারে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে নিজেদের রাজ্যে আমন্ত্রণ জানাবেন তাঁরা। নীতীশ কুমারের আপত্তিতে এত দিন বিহারে সে ভাবে প্রচারে আসেননি মোদী। কিন্তু গত কালের ফলের পরে বিহারের বিজেপি নেতারা উজ্জীবিত। নীতীশকে পাল্টা চাপ দিতে এ বারে তাঁরাও ঘুঁটি সাজাচ্ছেন।
বিজেপির এক মোদী-পন্থী নেতার কথায়, “গোয়ার বৈঠকে এমন সুর চড়ানো হবে যে মোদী-বিরোধীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। ইতিমধ্যেই তার ইঙ্গিত আসতে শুরু করেছে।” ক’দিন আগে মোদীর বিরোধিতা করার পরে উমা কর্মসমিতির বৈঠকে না আসার পিছনে অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছিলেন। এই মুহূর্তে ভোপালে রয়েছেন উমা। গত কালই ইন্দৌরে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বলেন, “মোদী সম্পর্কে এখন কিছু বলা মানে আগুনে ঘি ঢালার সামিল! তাঁর সম্পর্কে কিছু বললে দলের কেউ খুশি হন, কেউ রুষ্ট হন।” উমা শিবিরের এক নেতা জানান, দল যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলুক। উমা আর এর মধ্যে পড়তে চান না। আডবাণী যখন মোদীকে ঠেকাতে গডকড়ীকে প্রচার কমিটির প্রধান করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাখ্যান করে গডকড়ী বলেছিলেন, “মোদীপন্থী বা মোদী-বিরোধী গোষ্ঠীর মধ্যে পড়া আমার কাজ নয়।”
আগামিকাল থেকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায়, এখন সেটাই দেখার।
|