বিজেপি-র মুখ বাছতে এ বার সময়ের অপেক্ষা
গুজরাতের উপনির্বাচনে জয়ের দিনেই বিহারে তাঁর প্রধান সমালোচক নীতীশ কুমারের পরাজয়। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদী।
এমন এক দিনে গুজরাত এবং বিহারের উপনির্বাচনের ফল বেরোল, যে দিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিয়ে নীতীশ এবং মোদী, দু’জনেই দিল্লিতে। দু’জনের কেউই অবশ্য মুখোমুখি হননি। সম্মেলনের ফাঁকে নীতীশ কুমার ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের সঙ্গে অনেক ক্ষণ কথা সেরে নিলেন। কিন্তু মোদী সে মুখো না হয়ে দিব্যি পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। বরং, নিজের রাজ্যের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের হাত থেকে আসন ছিনিয়ে নেওয়ায় আরও আত্মবিশ্বাসী দেখাল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউপিএ-বিরোধী রাজ্যগুলির প্রতিনিধি হয়ে কেন্দ্র-বিরোধী আক্রমণে নেতৃত্ব দিলেন মোদী। সম্মেলনের শেষে পর্যায়ক্রমে বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে দেখা করে দলের নির্বাচনী প্রচারের প্রধান ওঠার কাজটাও অনেকটাই এগিয়ে রাখলেন।
মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পরে বিজেপি সভাপতি রাজনাথও জানিয়ে দিলেন মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করার পথে দলে কোনও বাধা নেই। গোয়ার কর্মসমিতির বৈঠকে বা তার পরে এই ঘোষণা হতেই পারে। এমনকী, বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করার প্রস্তাবে আডবাণীরও সায় আদায় করেছেন রাজনাথ। পাশাপাশি একটি পরিচালন কমিটি গড়ার যে প্রস্তাব আডবাণী দিয়েছেন, তা কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান রাজনাথ।
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, গুজরাতের উপনির্বাচনে জিতে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন মোদী। গুজরাতের যে আসনগুলিতে উপনির্বাচন হয়েছে, সেগুলি কংগ্রেসের দখলে ছিল। তাঁকে নেতৃত্বে তুলে আনা নিয়ে দল এবং দলের বাইরে যখন বিরোধ স্পষ্ট, সেই সময়ে এই আসনগুলি ছিনিয়ে এনে নিজের গ্রহণযোগ্যতাই আরও এক বার প্রমাণ করলেন মোদী। এ রাজ্যে হাওড়ার উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন নিজে প্রচারে নেমেছিলেন, গুজরাতে কিন্তু মোদী তা করেননি। বুঝিয়ে দিয়েছেন, গুজরাতে দলের জয়ের জন্য এখন আর তাঁর সশরীর উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ এ বার তিনি স্বচ্ছন্দে গুজরাতের বাইরে বেরোতে পারেন।
এনডিএ জোটে নীতীশই তাঁর প্রধান সমালোচক। এ বছরের শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে মোদীর বিকল্প নেতা বেছে নেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন নীতীশ। এই অবস্থায় একই দিনে বিহারে নীতীশের হারের দিনে নিজের রাজ্যের উপনির্বাচনে জয় বুঝিয়ে দিল, মোদী এখনও অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু বিজেপি ছাড়া নীতীশের গতি নেই।
বিহারের মহারাজগঞ্জ লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে আরজেডি প্রার্থী এবং প্রাক্তন নীতীশ-ঘনিষ্ঠ নেতা প্রভুনাথ সিংহ জিতেছেন প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোটে। মোদীকে নিয়ে নীতীশ কুমারের লাগাতার আক্রমণে বিরক্ত হয়েছিল বিহারের রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি সূত্রের খবর, এই অবস্থায় উপনির্বাচনে নীতীশের দলের পাশে কার্যত নামেননি বিজেপি কর্মীরা। কোথাও আবার নীতীশের হয়ে প্রচারে গিয়ে বিজেপি নেতারা মোদী-বিরোধিতার জন্য তাঁরই সমালোচনা করেছেন। অন্য দিকে মোদীর উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে লাগাতার প্রচারে অনেক দিন পরে আরজেডি-র শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মহারাজগঞ্জে লালুপ্রসাদ মুসলিম-যাদব সমীকরণকে এক জায়গায় আনতে পেরেছেন। বিজেপি নীতীশের সঙ্গে না থাকায় উচ্চ বর্ণের ভোটও জেডিইউয়ের বাক্সে পড়েনি। স্বভাবতই বিজেপি শিবির মনে করছে, এই হারে নীতীশ অনেকটাই ধাক্কা খেলেন। তাঁর পক্ষে এখন এনডিএ ছেড়ে যাওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ল। বিহারের বিজেপি নেতা রাজীবপ্রতাপ রুডির মতে, “নীতীশ কুমার এ বছরের শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে যে সময় দিয়েছেন, সেটি আসলে কৌশল। আসলে নীতীশ নিজেই এই সময়টুকু নিজের জন্য কিনতে চেয়েছেন।”
এত দিন পর্যন্ত মোদীকে বিজেপির মুখ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতে গিয়ে আডবাণীরা যুক্তি দিয়েছেন, নীতীশের মতো এনডিএ-র বর্তমান শরিক এবং সম্ভাব্য শরিকরা তাঁকে মেনে নেবেন না। আডবাণীর এই যুক্তি আজকের পরে অনেকটাই ধাক্কা খাবে। এতে আডবাণীর বিরোধিতার ধারও খানিকটা কমলো বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মতে, এই সুযোগে আডবাণীর কাছে গিয়ে পৃথক বৈঠক করে তিক্ততা কমানোর চেষ্টা করলেন মোদীও।

২০ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক
লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় দেশগুলি মিলিয়ে প্রায় ২০টি দেশের রাষ্ট্রদূত আজ দেখা করলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। বুধবার গুজরাত ভবনে প্রায় এক ঘণ্টা ২০ জন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। গুজরাতের সঙ্গে এই দেশগুলির সম্পর্কের উন্নতিই ছিল বৈঠকটির মূল উদ্দেশ্য। অথচ ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পর বহু দেশই ব্রাত্য ঘোষণা করেছিল মোদীকে। সেই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে কোস্টা রিকার রাষ্ট্রদূত বলেন, “পরিস্থিতি বদলেছে। আর গুজরাতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।” মাস পাঁচেক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেছিল। তখনই ইঙ্গিত মিলেছিল আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে মোদীর। বৈঠকের পর গুজরাত সরকারের তরফে একটি বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, গুজরাত যে ভাবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে তাতে মুগ্ধ ওই রাষ্ট্রদূতেরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.