|
|
|
|
মাওবাদী অর্থে বাঁধ দেবে কেন্দ্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
হাতে মারা দুষ্কর বুঝে মাওবাদীদের ভাতে মারার কৌশল নিতে চাইছে মনমোহন সরকার।
ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের লক্ষ্য এখন মাওবাদীদের অর্থের জোগান বন্ধ করা। আদিবাসী এলাকায় কেন্দু পাতার ব্যবসা বা খনি এলাকায় তোলাবাজি, চাঁদা বা হুমকি দিয়ে আদায় করা টাকা তাদের তহবিলের একটা বড় উৎস। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকাশ্য সংগঠনের মাধ্যমেও দেশের বিভিন্ন অংশ বা বিদেশ থেকে অনুদান জোগাড়ের চেষ্টা করে মাওবাদীরা। যা ব্যবহার করা হয় মূলত নতুন অস্ত্রশস্ত্র কেনার কাজে। সেই অর্থের জোগান বন্ধ করতে চাইছে কেন্দ্র। আজ মাওবাদী অধ্যুষিত ন’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ এই প্রস্তাব দেন। ঠিক হয়, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে ওই সব রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হবে। ছত্তীসগঢ়ের হামলার তদন্তের ভার ইতিমধ্যেই জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-কে দেওয়া হয়েছে। মাওবাদী নাশকতা সংক্রান্ত আরও বেশ কিছু মামলা এনআইএ-র হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে অর্থের উৎস সন্ধানে সুবিধে হবে।
আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও ওড়িশার সঙ্গে রাজ্যের সীমানা সিল করে দেওয়া হোক। কারণ পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী সমস্যা অনেকাংশেই সমাধান করা গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও ওই সব রাজ্য থেকে মাওবাদীরা ঢুকে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অসমেও মাওবাদী প্রভাব দেখা দেওয়ায় তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
মাওবাদীদের টাকা পাওয়া রুখতে চাইলেও তাদের দমনে রাজ্যগুলিকে ঠিক মতো অর্থ না জোগানোর জন্য আজ মুখ্যমন্ত্রীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, মাওবাদী সমস্যা সমাধানে নিচু তলায় পুলিশবাহিনী বাড়াতে হবে। থানাগুলিকে মজবুত করতে হবে। তার জন্য পুলিশ বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, তা কাজে লাগাতে বলা হয় রাজ্যগুলিকে। কিন্তু পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, কেন্দ্র এ বিষয়ে এতটাই আন্তরিক হলে আধুনিকীকরণের খাতে কেন্দ্রের অনুদান কমানো হচ্ছে কেন? পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে সব রাজ্যই এই প্রশ্ন তুলেছে। এমনকী সন্ধের ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও এ বিষয়ে সরব হন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। রাজ্যগুলির অভিযোগ, আগে পুলিশ বাহিনীর আধুনিকীকরণের খরচের ২৫ শতাংশ রাজ্যগুলিকে দিতে হত। রাজ্যগুলি অনুরোধ করেছিল, যেন পুরো টাকাটাই কেন্দ্র দেয়। অথচ তার পরিবর্তে চলতি অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যের দায় ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যগুলির চাপের মুখে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় সড়ক তৈরির জন্য টাকা বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিয়মকানুন শিথিল করা হবে। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার আবার প্রশ্ন তুলেছেন, মাওবাদীরা বিশেষ একটি রাজ্যের সমস্যা নয়। এটা দেশের সমস্যা। তা হলে মাওবাদী দমনে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাবদ রাজ্যগুলির থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে কেন?
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে দু’জনেই জানিয়েছেন, মাওবাদী মোকাবিলায় উন্নয়ন ও যৌথ বাহিনীর অভিযানের দু’মুখো রণকৌশল নিয়েই চলবে কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ছত্তীসগঢ়ের হামলার পরে এই রণকৌশল আরও মজবুত করতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ক্যাবিনেট-সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে। এর পরে ১০ জুন এ বিষয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনা হবে। |
|
|
|
|
|