রেশনে নিম্ন মানের চাল-আটা সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায়। সেই নিম্নমানের চাল-আটা একশ্রেণির গ্রাহক আবার খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রেশনে সস্তায় কেরোসিন কিনে তা দোকানে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে বালুরঘাট ও লাগোয়া এলাকায়। সম্প্রতি বালুরঘাটে গেলে ওই অভিযোগ শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, “নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের নির্দিষ্ট অভিযোগ গ্রাহকেরা করুন। কড়া পদক্ষেপ করব। রেশনের জিনিস কোলাবাজারে বিক্রি হওয়ার স্পষ্ট খবর পেলে অভিযান চালানো হবে।” দক্ষিণ দিনাজপুরের খাদ্য নিয়ামক ভাস্কর হালদারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে রেশনে বিলি হওয়া মোটা চালের বদলে অপেক্ষাকৃত সরু চাল অল্প আয়ের মানুষ পছন্দ করেন বলে মনে করেন জেলা খাদ্য নিয়ামক। জেলা খাদ্য সরবরাহ দফতর সূত্রের খবর, প্রায় এক বছরের পুরনো চাল এবং কয়েক মাসের পুরনো আটা রেশনে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সরকারি আধিকারিক জানান, বিপিএল ভুক্তরাও অনেকে রেশনের মোটা চাল খান না। গ্রামাঞ্চলে কিছু সম্প্রদায় মোটা চাল ব্যবহার করেন ঠিকই। কিন্তু ডিস্ট্রবিউটার থেকে রেশন দোকান পর্যন্ত খাদ্যসামগ্রীর মান পরীক্ষার পর্যাপ্ত কোনও ব্যবস্থা না-থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান। খাদ্য দফতরের সূত্রের খবর, জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের অধীন ২২ জন ইন্সপেক্টর থাকার কথা। আছেন মাত্র ৩ জন। তাই নজরদারির অভাব রয়ে গিয়েছে। গণবন্টন ব্যবস্থায় ৪ জন গরিব প্রাপ্তবয়স্কের পরিবারে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী ইউনিট পিছু সপ্তাহে মোট ৪ কেজি চাল, ৩ কেজি আটা এবং ১ লিটার কেরোসিন তেল। প্রাপ্য ওই রেশন সামগ্রী কিনতে খরচ প্রায় ৫০ টাকা। বাজারে বেচলে হাতে নগদ ১১০ টাকা। বাড়তি ৬০ টাকা পেয়ে সংসারে অন্য কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি গ্রাহকেরা মুখে দেওয়ার মতো খাদ্যসামগ্রী বেছে কিনতে পারছেন। রেশনে প্রায় ১৬ টাকা লিটার কেরোসিনের খোলা বাজারে দর ৩০-৩৫ টাকায় বেচে সংসারে অন্য চাহিদা মেটাতে পারছেন। গরিবেরা শহরের প্রাচ্য ভারতী পাড়ার বিপিএল গ্রাহক নিরঞ্জন দাস, অভিজিত মোহান্ত, দীনেশ রায়েরা অভিযোগ করেন, “রেশনের নোংরা মোটা চাল সেদ্ধ হয় না। আটা মুখে দেওয়া যায় না। তাই বরাদ্দ মাল রেশন দোকান থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করা ছাড়া উপায় কি? বাড়তি টাকা পেয়ে ভাল জিনিস কিনছি।” খোলা বাজারে দোকানিদের কেনা ওই সমস্ত মাল বিভিন্ন সংস্থা কিনে সাফ সুতরোর প্রক্রিয়ায় ফেলে তাতে সিল-ছাপ মেরে নতুন প্যাকেটে বাজারে ছাড়ছেন। ঘুরে ফিরে সে সামগ্রী চলে আসছে হেঁসেলে। তৈরি হচ্ছে গরম ভাত ও রুটি। ভর্তুকির কেরোসিন বেচে লাভ হচ্ছে দ্বিগুণ। |