হঠাৎ করে মনে হতে পারে কোনও গ্রামের এঁদো গলি যাচ্ছে বাস। কখনও বাঁদিকে হেলে পড়ছে। কখনও ডানদিকে। সামনের স্ক্রিন দিয়ে বাইরেটা মনে হচ্ছে বড়-ছোট ডোবা। এর পরেই সারি সারি গাড়ির লাইন। এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, তিন ঘন্টাতেও কাটছে না যানজট।
শিলিগুড়ি-কোচবিহার প্রধান সড়কের বেহাল দশায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। অভিযোগ উঠেছে, বর্ষা শুরু হতে এখনও কয়েকদিন বাকি। তার আগেই জাতীয় সড়কের যা হাল তাতে বর্ষার সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “রাস্তা সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে ৪৫ লক্ষ টাকা তারা দিতে চাইছে। তা দিয়ে কতটুকু কাজ হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই রাস্তা দ্রুত সংস্কার করা হয়। রাজগঞ্জের বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা খগেশ্বর রায় রাস্তা সারানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন,“বর্ষা শুরুর আগেই রাস্তা সারানো উচিত ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে হয়ে করার জন্য রাস্তা সারাচ্ছে না। মানুষকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা আমরা মানব না।” |
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার-শিলিগুড়ি প্রায় ১২০ কিলোমিটার রাস্তা। কোচবিহার-কালচিনি-ধূপগুড়ি-ময়নাগুড়ি আর একটি রাস্তা শিলিগুড়ি যাওয়ার আরও একটি বিকল্প রাস্তা রয়েছে। যেটি মাথাভাঙ্গা, চ্যাংরাবান্ধা, ময়নাগুড়ি, বাইপাস হয়ে শিলিগুড়ি যায়। ওই রাস্তা কিলোমিটার হিসেবে আরও খানিকটা বেশি। যাত্রী, চালক ও বাস মালিকদের অভিযোগ, শিলিগুড়ি শহর পার হওয়ার পর থেকেই রাস্তার বেহাল দশা নজরে পড়ে। ফাটাপুকুর, রাজগঞ্জে রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ধূপগুড়ি পর্যন্ত রাস্তার ওই বেহাল দশা। ওই রাস্তায় নিত্যদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন কোচবিহারে বাসিন্দা রঞ্জিত ঘোষ। তিনি বলেন,“প্রাণ হাতে করে বাস চালাচ্ছি। বেশ কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।”
চালকদের অভিযোগ, প্রতিদিন ওই রাস্তার দুটি, তিনটি করে গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। মঙ্গলবার ওই রাস্তায় দু’টি ট্রাক খারাপ হয়েছিল। বুধবারও একটি ট্রাক খারাপ হয়েছিল। এক চালক জানান, ফাটাপুকুরে গাড়ি যানজট থাকায় অন্য একটি গলি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সমস্ত গাড়ি। পরে বেলাকোবার ভিতর দিয়ে গোশালা মোড়ে ওঠেন। তারপরেও যানজটে আটকে থাকতে হয়। রাস্তা ঠিক থাকলে সাড়ে তিন ঘন্টায় কোচবিহার থেকে শিলিগুড়ি আসা যাওয়া করা যায়। কিন্তু এখন দ্বিগুণ সময় লাগছে। ব্যবসার কাজে মাঝে মাঝে শিলিগুড়ি-কোচবিহার যাতায়াত করেন শঙ্কর সাহা। তিনি বলেন,“গরমের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা বাসে বসে থাকতে হয়। বাস যখন চলে তখনও মনে হয় বাস উল্টে গেল।” কোচবিহারের বাসন্দাদের অভিযোগ ,কোনও মানুষ গুরুতর অসুস্থ বলে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ বা শিলিগুড়ির কোনও নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে হলে রাস্তার যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। নর্থ বেঙ্গল প্যাসেঞ্জার্স ওনার্স ট্রান্সপোর্ট কো অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক প্রণব মানি বলেন,“আমরা স্মারকলিপি দিতে দিতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছি। বাম আমলেও যা ছিল এখনও তাই। যাত্রীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। গাড়ি দু’দিন পর পর খারাপ হয়ে যায় এরপরে বাস চালানো বন্ধ করে দিতে হবে।” ময়নাগুড়ির আর এসপির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী বলেন,“দ্রুত রাস্তা সারানো না হলে পনেরো দিন পর থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেব।” |