কারণ জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী
ন্যায্য মূল্যের দোকানে নেই বহু ওষুধ, অভিযোগ
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিজের দিদিমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কসবার রবি হালদার। বৃদ্ধার স্ট্রোক হয়েছিল। রবির অভিজ্ঞতা, “সিটি স্ক্যান করানোর পরে ডাক্তারবাবু প্রেসক্রিপশনে দশ রকম ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন। ন্যায্য মূল্যের দোকানে খোঁজ করে দেখলাম, তার মধ্যে সেখানে রয়েছে মাত্র দু’রকম ওষুধ।”
একই অভিজ্ঞতা এসএসকেএমের ইউরোলজি বিভাগে ভর্তি বর্ধমানের এক রোগীর পরিজনদেরও। তাঁদের কথায়, “এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ন’টা ওষুধের মধ্যে দু’টো পেয়েছি। তা-ও জেনেরিক নয়, ব্র্যান্ড নেমের।”
মূলত এই দুই অভিযোগেই বারংবার ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্যের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান প্রকল্প। প্রথম অভিযোগ, বেশির ভাগ ওষুধই ওই দোকানগুলিতে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে চিকিৎসকেরা জেনেরিক নামে ওষুধ লেখার অভ্যাস শুরু করলেও ন্যায্য মূল্যের দোকানে ব্র্যান্ড নেমের ওষুধই বেশি থাকছে। সমস্যার সমাধানে ওষুধের দোকানের কর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের সমন্বয় বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশনে যা লিখছেন, তার অর্ধেকেরও বেশি ওষুধ কেন ন্যায্য মূল্যের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না, দু’পক্ষের কাছে তারও জবাবদিহি চেয়েছেন তিনি।
সরকারি হাসপাতালে ধাপে ধাপে মোট ৩৫টি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান খোলার কথা ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই ২৯টি দোকান খোলা হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ছ’টিও খোলা হয়ে যাবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। কিন্তু সমস্যা হল, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের বিরোধ ক্রমে বেড়ে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও গোড়ায় বহু জায়গাতেই চিকিৎসকেরা জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখতে আগ্রহ দেখাননি। এ নিয়ে সরকারি তরফে কড়াকড়ি শুরু হতে চিকিৎসকেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লিখলেও ন্যায্য মূল্যের দোকানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যখন তা পাওয়া যাচ্ছে না, তখন চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে লাভটা কী?
বস্তুত, সরবরাহের এই ঘাটতিই ন্যায্য মূল্যের দোকান সম্পর্কে একটা বড় অভিযোগের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, তা সত্ত্বেও ক্রেতা-বিক্রেতা দু’তরফেই লাভের অঙ্কটা কম নয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে এসএসকেএমে বিক্রি হয়েছে দু’কোটিরও বেশি টাকার ওষুধ। আর যেহেতু ৬৬ শতাংশের মতো ছাড় পেয়েছেন ক্রেতারা, তাই ছাড় যোগ করলে টাকার অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে পাঁচ কোটিরও বেশি। এতটা না হলেও এর কাছাকাছি লাভ হয়েছে বাঙুর হাসপাতালের দোকানেও। ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কলকাতা মেডিক্যাল এবং আরজিকর সম্পর্কে কিছু অভিযোগ থাকলেও লাভ সেখানেও মন্দ নয়। এই নমুনা তুলে ধরে স্বাস্থ্যকর্তারা বোঝাতে চাইছেন, প্রকল্প সফল হলে দু’পক্ষই উপকৃত হবেন।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র শিখা অধিকারী বলেন, “ব্যবস্থাটা কী ভাবে ত্রুটিহীন করা যায়, সে ব্যাপারে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। আশা করা যায়, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সমস্ত অভিযোগের শেষ হবে।”
প্রশ্ন হল, কেন দোকানগুলিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকছে না? সংশ্লিষ্ট দোকানগুলির আবার অভিযোগ, চিকিৎসকেরাই জেনেবুঝে তালিকায় নেই, এমন ওষুধ লিখছেন। পাশাপাশি, ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে যাতে ওষুধ কেনা না হয়, সে ব্যাপারে চাপও তৈরি করছেন তাঁরা। এই সমস্যার সমাধানে দিন কয়েকের মধ্যেই স্বাস্থ্য ভবনে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
এ দিকে, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর পরিদর্শনের পরে বুধবারই পাঁচ জন রোগী ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে স্টেন্ট পেয়েছেন। এ দিন স্বাস্থ্য, পূর্ত দফতর ও পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। রোগীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন লেখার সময়ে কার্বন পেপার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রী, তথা এসএসকেএমের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত মদন মিত্র জানিয়েছেন, এর ফলে কোনও চিকিৎসক জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন না লিখলে তাঁকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.